দুই বছর ধরে ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী হিসেবে আছেন সেলিম আর. এফ. হোসেন। তার সময়ে ব্যাংকটি সব দিক দিয়েই অগ্রগতির মধ্যে আছে। এ নিয়ে গর্বিত এমডির ভাষ্য, ‘২০১৭ সাল ব্র্যাক ব্যাংকের জন্য মাইলফলক অর্জনের বছর ছিল। প্রযুক্তিতে ও মানসম্পদের উন্নয়নকল্পে ব্র্যাক ব্যাংক উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ করেছে, যা দেশের সেরা ব্যাংক হওয়ার পথে তাকে এক ধাপ এগিয়ে নিয়েছে। মূল্যবোধ বিষয়ে আমরা সবসময় আপোষহীন এবং সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও কর্মীদের কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে আমরা ক্রমশঃ সেরা ব্যাংক হওয়ার পথে এগিয়ে যাচ্ছি।’
গতকাল ৪ এপ্রিল বুধবার ব্যাংকটির সর্বশেষ নিরীক্ষিত ফলাফল প্রকাশ ও পর্যালোচনা উপলক্ষে নিজেদের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সেলিম আর. এফ. হোসেন।
২০১৭ সালে ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেডের নিট মুনাফা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ৩৫ শতাংশ বেড়েছে। আয়োজনে এ তথ্য জানান ব্যাংকটির কর্মকর্তারা। অনুষ্ঠানে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, বিশ্লেষক ও পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ এবং গণমাধ্যমকর্মীদের সামনে ব্যাংকের হালনাগাদ আর্থিক ফলাফল ও ব্যবসায়িক অবস্থা তুলে ধরা হয়। প্রশ্নোত্তর পর্বে বিনিয়োগকারীদের নানা জিজ্ঞাসার জবাব দেন ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী সহ অন্য কর্মকর্তারা
অনুষ্ঠানে ছিলেন এই ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান অর্থ কর্মকর্তা এ কে জোয়াদ্দার, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিআরও চৌধুরী আখতার আসিফসহ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
বিদেশি বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণের সুযোগ করে দিতে অনুষ্ঠানটি ইন্টারনেটে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। ফলাফল পর্যালোচনাকালে সেলিম আর. এফ. হোসেন জানান, ২০১৭ সালে কর পরিশোধের পর ব্র্যাক ব্যাংকের সমন্বিত নিট মুনাফা দাঁড়ায় ৫৪৯ কোটি ৮০ লাখ টাকায়, যা ২০১৬ সালে ছিল ৪০৭ কোটি ৬০ লাখ টাকা। ২০১৬ সালে তাদের সমন্বিত পরিচালন মুনাফা হয়েছিল ৮৬১ কোটি ১০ লাখ টাকা, ২০১৭ সালে যা বেড়ে দাঁড়ায় ৯৪২ কোটি ২০ লাখ টাকা।
সর্বশেষ হিসাব বছরে ব্যাংকটির শেয়ারপ্রতি সমন্বিত আয় (ইপিএস) হয় ৬ টাকা ৭ পয়সা, যা ২০১৬ সালে ছিল ৪ টাকা ৫৫ পয়সা। সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানগুলোর হিসাব-নিকাশ বাদ দিলে ২০১৭ সালে এককভাবে ব্র্যাক ব্যাংকের ইপিএস দাঁড়ায় ৬ টাকা ১৪ পয়সা, আগের বছর যা ছিল ৫ টাকা ২৩ পয়সা। গত ৩১ ডিসেম্বর ব্র্যাক ব্যাংকের শেয়ারপ্রতি সমন্বিত নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়ায় ৩১ টাকা ১০ পয়সা, শুধু ব্যাংক কোম্পানিটির ক্ষেত্রে যা ৩০ টাকা ৩৯ পয়সা।
২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত হিসাব বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে ২৫ শতাংশ স্টক লভ্যাংশ সুপারিশ করেছে ব্র্যাক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ। নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন, লভ্যাংশ ও অন্যান্য এজেন্ডা অনুমোদনের জন্য ২৬ এপ্রিল বেলা ১১টায় ঢাকার সাভারে অবস্থিত ব্র্যাক-সিডিএমে বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) আয়োজন করবে কোম্পানিটি। এজন্য রেকর্ড ডেট নির্ধারণ করা হয়েছে ১১ এপ্রিল।
এদিকে অনুমোদিত মূলধন ১ হাজার ২০০ কোটি থেকে বাড়িয়ে ২ হাজার কোটিতে উন্নীত করারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে ব্র্যাক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ। কোম্পানির মেমোরেন্ডাম অব অ্যাসোসিয়েশনের ৬ নং ধারা ও আর্টিকেলস অব অ্যাসোসিয়েশনের ৪ নং ধারাও সংশোধন করা হবে। এজন্য পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও শেয়ারহোল্ডারদের অনুমোদনের প্রয়োজন হবে তাদের। শেয়ারহোল্ডারদের অনুমোদন নিতে একই দিন একই স্থানে সকাল ১০টায় ইজিএম আয়োজন করবে ব্যাংকটি, যার রেকর্ড ডেট ছিল ৩ এপ্রিল।
২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত হিসাব বছরের জন্য ২০ শতাংশ স্টক লভ্যাংশের পাশাপাশি ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশও পেয়েছিলেন ব্যাংকটির শেয়ারহোল্ডাররা। এর আগে ২০১৫ হিসাব বছরের জন্য শেয়ারহোল্ডারদের ২৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয় ব্র্যাক ব্যাংক।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে সর্বশেষ ১০০ টাকা ৩০ পয়সায় ব্র্যাক ব্যাংকের শেয়ার হাতবদল হয়। গত এক বছরে শেয়ারটির সর্বনিম্ন দর ছিল ৭০ টাকা ৪০ পয়সা ও সর্বোচ্চ ১১৪ টাকা ৪০ পয়সা।
ব্র্যাক ব্যাংক ২০০৭ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। বর্তমানে এর অনুমোদিত মূলধন ১ হাজার ২০০ কোটি ও পরিশোধিত মূলধন ৮৫৮ কোটি টাকা। রিজার্ভে রয়েছে ৮৫৫ কোটি ২৬ লাখ টাকা। ব্যাংকের মোট শেয়ারের মধ্যে উদ্যোক্তা-পরিচালক ৪৪ দশমিক ৩ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ৮ দশমিক ৫৯, বিদেশী ৪০ দশমিক ৩২ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীর কাছে রয়েছে বাকি ৬ দশমিক ৭৯ শতাংশ।