সর্বশেষ সংবাদ
Home / ধর্ম / হাদিস অনুযায়ী মানব জীবনে রোজার উপকারিতা

হাদিস অনুযায়ী মানব জীবনে রোজার উপকারিতা

রোজার ফজিলত ও উপকারিতা অনেক। হাদিসে এ সম্বন্ধে বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে। বুখারি শরিফে বর্ণিত এক হাদিসে বর্ণিত আছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত; প্রিয় নবী মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, রোজা ঢালস্বরূপ। সুতরাং রোজা অবস্থায় যেন অশ্লীলতা থেকে বিরত থাকে এবং অজ্ঞ-মূর্খের মতো কোনো কাজ না করে। কেউ যদি তার সঙ্গে ঝগড়া-ফ্যাসাদ করতে চায়, অথবা গালি দেয়, তবে সে যেন দুবার বলে, আমি রোজাদার। ওই সত্তার শপথ, যার নিয়ন্ত্রণে আমার প্রাণ, অবশ্যই রোজাদারের মুখের দুর্গন্ধ আল্লাহর কাছে মেশক্র ঘ্রাণের চেয়েও অধিক উৎকৃষ্ট। সে আমারই জন্য পানাহার এবং কামপ্রবৃত্তি পরিত্যাগ করে। রোজা আমারই জন্য, তাই এর পুরস্কার আমি নিজেই দান করব। আর প্রত্যেক নেক কাজের বিনিময়ে দশগুণ। অপর হাদিসে আছে, হজরত সাহল (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেন, জান্নাতের মধ্যে রাইয়ান নামক একটি দরজা আছে, এ দরজা দিয়ে কেবল কেয়ামতের দিন রোজাদাররা প্রবেশ করবে। তাদের ছাড়া আর কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। ঘোষণা দেওয়া হবে, রোজাদার লোকেরা কোথায়? তখন তারা দাঁড়াবে, সামনে অগ্রসর হবে, তাদের ছাড়া আর কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে না। তাদের প্রবেশের পরেই দরজা বন্ধ করে দেওয়া হবে। যাতে এ দরজা দিয়ে আর কেউ প্রবেশ করতে না পারে। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, রোজা এবং কোরআন বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। রোজা বলবে, হে আমার রব! আমি তাকে দিনের বেলা পানাহার ও যৌনক্রিয়া থেকে বিরত রেখেছি। তার সম্পর্কে আমার সুপারিশ কবুল করুন। কোরআন বলবে, আমি তাকে রাতে নিদ্রা থেকে বিরত রেখেছি। তার সম্পর্কে আমার সুপারিশ কবুল করুন। তখন এদের সুপারিশ কবুল করা হবে (মিশকাত)। রোজার মধ্যে অনেক উপকারিতা নিহিত আছে। এ সম্বন্ধে হাকিমুল উম্মত হজরত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী (রহ.) “আহকামে ইসলাম আকল কি নজর মে” নামক গ্রন্থে দীর্ঘ আলোকপাত করেছেন। তার মধ্য থেকে কতিপয় বিষয় নিম্নে উল্লেখ করা হলো। ১. রোজা দ্বারা প্রবৃত্তির ওপর আকলের পরিপূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়। অর্থাৎ এর দ্বারা মানুষের পাশবিক শক্তি অবদমিত হয় এবং রুহানি শক্তি বৃদ্ধি পায়। কেননা ক্ষুধা ও পিপাসার কারণে মানুষের জৈবিক ও পাশবিক ইচ্ছা হ্রাস পায়। এতে মন্যুষত্ব জাগ্রত হয় এবং অন্তর বিগলিত হয় মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের প্রতি কৃতজ্ঞতায়। ২. রোজার দ্বারা মানুষের অন্তরে আল্লাহতায়ালার ভয়ভীতি এবং তাকওয়ার গুণ সৃষ্টি হয়। এ কারণে আল্লাহতায়ালা বলেছেন, যাতে তোমরা তাকওয়ার গুণ অর্জন করতে সক্ষম হও। ৩. রোজার দ্বারা মানুষের স্বভাবে নম্রতা ও বিনয় সৃষ্টি হয় এবং মানব মনে আল্লাহর আজমত ও মহানত্বের ধারণা জাগ্রত হয়। ৪. মানুষের চিন্তা-চেতনা ও দূরদর্শিতা আরও প্রখর হয়। ৫. রোজার দ্বারা মানব মনে এমন এক নূরানি শক্তির সৃষ্টি হয়, যার দ্বারা মানুষ সৃষ্টির এবং বস্তুর গূঢ় রহস্য সম্বন্ধে অবগত হতে সক্ষম হয়। ৬. রোজার বরকতে মানুষ ফেরেশতা চরিত্রের কাছাকাছি পৌঁছতে সক্ষম হয়। ৭. রোজার বরকতে মানুষের মধ্যে পরস্পরের ভ্রাতৃত্ব ও মমত্ববোধ এবং পরস্পরের প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টি হয়। কেননা যে ব্যক্তি কোনো দিনও ক্ষুধার্ত ও পিপাসিত থাকেনি, সে কখনো ক্ষুধার্ত মানুষের দুঃখ-কষ্ট বুঝতে পারে না। অপরদিকে কোনো ব্যক্তি যখন রোজা রাখে এবং উপবাস থাকে, তখন সে যথাযথভাবে উপলব্ধি করতে পারে, যারা অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছে, তারা যে কত দুঃখ-কষ্টে দিনাতিপাত করছে, আর তখনই অনাহারক্লিষ্ট মানুষের প্রতি তার অন্তরে সহানুভূতির উদ্রেক হয়। ৮. রোজা পালন করা আল্লাহর প্রতি গভীর মহব্বতের অন্যতম নিদর্শন। কেননা কারও প্রতি মহব্বত জন্মালে, তাকে লাভ করার জন্য প্রয়োজনে প্রেমিক পানাহার বর্জন করে এবং সব কিছুকে ভুলে যায়। ঠিক তেমনিভাবে রোজাদার ব্যক্তিও আল্লাহর মহব্বতে দিওয়ানা হয়ে সব কিছু ছেড়ে দেয়, এমনকি পানাহার পর্যন্ত ভুলে যায়। তাই রোজা হলো আল্লাহর মহব্বতের অন্যতম নিদর্শন। ৯. রোজা মানুষের জন্য ঢালস্বরূপ। কেননা একজন রোজাদারকে শয়তান কখনো পরাস্ত করতে পারে না। মানুষের ভিতরে প্রবেশ করার সব কুন্ডপ্রবৃত্তির যেসব দরজা রয়েছে, সেগুলো সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যায়, তথা নিস্তেজ হয়ে যায়। কোনো প্রকার চাহিদা থাকে না। যার ফলে শয়তান প্রবেশের কোনো সুযোগ পায় না। যেন সে মানুষটি শয়তানের কাছে দুর্ভেদ্য প্রাচীরে রক্ষিত। যেমন ফেরেশতার কোনো চাহিদা নেই, তাকে ধোঁকা দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তাই রোজা প্রতিটি মানুষকে সব অন্যায়, অশ্লীল ও গুনাহর কাজ থেকে রক্ষা করে। ১০. রোজার দ্বারা মানুষের শারীরিক সুস্থতা হাসিল হয়। স্বাস্থ্য বিজ্ঞানীদের মতে, প্রত্যেক মানুষের জন্য বছরে কয়েক দিন উপবাস থাকা আবশ্যক। তাদের মধ্যে স্বল্প খাদ্য গ্রহণ স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। সুফি-সাধকদের মতে, হৃদয়ের স্বচ্ছতা হাসিলে স্বল্প খাদ্য গ্রহণের বিরাট ভূমিকা রয়েছে। রোজা দেহের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এর কারণে শরীরে চর্বি জমতে পারে না। পক্ষান্তরে মাত্রাতিরিক্ত পানাহারের ফলে শরীরে অধিকাংশ রোগব্যাধি সৃষ্টি হয়ে থাকে।  আল্লাহপাক আমাদের পবিত্র রমজানুল মোবারকের সব রোজা সুস্থ ও সুন্দরভাবে রাখার তৌফিক দান করুন,  আমিন।

About admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

x

Check Also

জু’মআর নামাযঃ  ফযিলত ও গুরুত্ব

মাওলানা সাইফুল ইসলামশি,ক্ষক: মাদরাসাতুল হিকমাহ,ঢাকা: ২৪ ফিট, রসূলবাগ, কদমতলী, ঢাকা   একজন ব্যক্তি ঈমান আনার ...