আন্তর্জাতিক ডেস্ক : স্বৈরাচারের হুমকির মুখে তাইওয়ান পিছপা হবে না বলে মন্তব্য করেছেন ভূখণ্ডটির ভাইস প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম লাই। একইসঙ্গে তাইওয়ান নিরাপদ থাকলে বিশ্ব নিরাপদ থাকবে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রে সংক্ষিপ্ত সফরের সময় সমর্থকদের উদ্দেশ্যে এসব কথা বলেন তিনি।
অবশ্য ভাইস প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম লাইয়ের যুক্তরাষ্ট্র সফর নিয়ে ক্ষোভ ও নিন্দা জানিয়েছে চীন। সোমবার (১৪ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
তাইওয়ানের ভাইস প্রেসিডেন্ট লাই প্যারাগুয়েতে একটি রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার আগে যুক্তরাষ্ট্রে ‘সংক্ষিপ্ত সফর’ করেন। তিনি রোববার নিউইয়র্ক শহরে নেমে সেখানকার ম্যানহাটনে যান। প্যারাগুয়ে শুধুমাত্র ১৩ টি দেশের মধ্যে একটি যার সঙ্গে তাইওয়ানের আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক রয়েছে।
তবে এ বিষয়টি ভালোভাবে নেয়নি বেইজিং। আর এরপরই ‘সার্বভৌমত্ব’ রক্ষায় তাইওয়ানের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দেয় বেইজিং। মূলত উইলিয়াম লাই তাইওয়ানের ভাইস প্রেসিডেন্ট হলেও ভূখণ্ডটির পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন।
রয়টার্স বলছে, তাইওয়ান এবং যুক্তরাষ্ট্র উভয়ই উইলিয়াম লাইয়ের এই ট্রানজিট সফরকে নিয়মিত বলে আখ্যা দিলেও চীন এই সফরের নিন্দা করেছে এবং লাইকে বিচ্ছিন্নতাবাদী ‘সমস্যা সৃষ্টিকারী’ বলে অভিহিত করেছে।
তাইওয়ানের পক্ষ থেকে অবশ্য দাবি করা হয়েছে, ভাইস প্রেসিডেন্ট লাই কোনো আনুষ্ঠানিক সফরে যুক্তরাষ্ট্রে যাননি। মূলত প্যারাগুয়েতে যাওয়ার পথে সেখানে ট্রানজিট নিয়েছেন তিনি। কিন্তু চীন এটিকে আনুষ্ঠানিক সফর হিসেবেই দেখছে। তিনি প্যারাগুয়ে থেকে ফেরার পথে সান ফ্রান্সিসকোতে আবারও ‘সংক্ষিপ্ত বিরতি’ দেবেন।
সংক্ষিপ্ত এই সফরে রোববার নিউইয়র্কে একটি মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেন লাই। সেখানে তিনি বলেন, ‘যদি তাইওয়ান নিরাপদ থাকে, তাহলে বিশ্ব নিরাপদ। যদি তাইওয়ান প্রণালী শান্তিপূর্ণ থাকে, তবে বিশ্ব শান্তিপূর্ণ থাকবে।’
চীনের নাম উল্লেখ না করে তিনি বলেন, ‘আমরা সঠিক পথেই রয়েছি। স্বৈরাচারের ক্রমবর্ধমান হুমকির কারণে ভয় পাবেন না এবং পিছপা হবেন না। তাইওয়ানকে গণতন্ত্রের পথে এগিয়ে নিতে আমাদের অবশ্যই সাহসী এবং শক্তিশালী হতে হবে।’
রয়টার্স বলছে, তাইওয়ানের ভাইস প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম লাইকে চীন পছন্দ করে না এবং এর পেছনে একটি বিশেষ কারণও রয়েছে। ইতোপূর্বে লাই নিজেকে ‘তাইওয়ানের স্বাধীনতার পক্ষের কর্মী’ বলে আখ্যায়িত করেছিলেন। যদিও তাইওয়ানে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন লাই।
নিজের সংক্ষিপ্ত সফরের সময় উইলিয়াম লাই নিউইয়র্কে জানিয়েছেন, মর্যাদা ও সমতার মৌলিক ভিত্তিতে তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েনের নীতি অনুসরণ করে চীনের সাথে কথা বলতে এবং শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখা নিশ্চিত করতে তিনি ‘খুবই ইচ্ছুক’।
কিন্তু লাই এটাও বলেছেন, তিনি তাইওয়ানের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করবেন। তার দাবি, শুধুমাত্র তাইওয়ানের জনগণই তাদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে পারে এবং চীনা প্রজাতন্ত্র – তাইওয়ানের আনুষ্ঠানিক নাম – এবং গণপ্রজাতন্ত্রী চীন ‘একে অপরের অধীনস্থ নয়’।
উল্লেখ্য, এদিকে আগামী জানুয়ারিতে তাইওয়ানে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ধারণা করা হচ্ছে, বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম লাই ওই নির্বাচনে ভূখণ্ডটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন। এছাড়া লাইকে নিয়ে চীন একটু বেশি উদ্বিগ্ন। কারণ লাই তাইওয়ানের স্বাধীনতার পক্ষের লোক।
চীন সব সময় তাইওয়ানকে নিজেদের অংশ হিসেবে দাবি করলেও কয়েকদিন আগে এক টিভি সাক্ষাৎকারে লাই বলেছিলেন, ‘তাইওয়ান চীনের অংশ নয়।’