পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘মানুষের মধ্যে কেউ কেউ আল্লাহ ছাড়া অপরকে আল্লাহর সমকক্ষরূপে গ্রহণ করে এবং আল্লাহকে ভালোবাসার মতো তাদের ভালোবাসে। কিন্তু যারা ঈমান এনেছে আল্লাহর প্রতি ভালোবাসায় তারা সুদৃঢ়। ’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৬৫)
মুমিন আল্লাহকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে। কেননা তারা আল্লাহকে সবচেয়ে বেশি চেনে, সবচেয়ে বেশি জানে, সবচেয়ে বেশি সম্মান করে এবং তাঁকে এক ও অদ্বিতীয় প্রতিপালক হিসেবে বিশ্বাস করে।
মুমিনরা আল্লাহকে ভালোবাসে কেননা সে জানে আল্লাহই তার সবচেয়ে দয়ালু অভিভাবক, তিনিই তাকে জীবিকা দান করেন এবং তাকে সমূহ বিপদ থেকে রক্ষা করেন। অর্থাৎ ঈমান ও বিশ্বাসই মুমিনকে আল্লাহর ভালোবাসার প্রতি উদ্বুদ্ধ করে। অন্যদিকে আল্লাহর ভালোবাসা মুমিনের ঈমানের পূর্ণতা দান করে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তিনটি বৈশিষ্ট্য যার মধ্যে থাকবে সে ঈমানের স্বাদ লাভ করবে : (একটি হলো) আল্লাহ ও তাঁর রাসুল তার কাছে অন্য সবার চেয়ে প্রিয় হবে। ’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২১)
শায়খ মুহাম্মদ বিন নাসর মারওয়াজি বলেন, ‘ঈমান ও ভালোবাসার ভেতর বিচ্ছিন্নতা অসম্ভব। একটি থেকে অপরটি পৃথক হওয়া খুবই কষ্টকর। যেমন সম্ভব নয় বিদ্বেষ ও কুফরির বিচ্ছিন্নতা। ঈমান স্বয়ং ভালোবাসা, ভিন্ন কিছু না। বিদ্বেষ কুফরিরই অংশ, অন্য কিছু না। ’ (তাজিমু কাদরিস সালাত : ২/৭৪১)
আল্লামা ইবনুল কায়্যিম (রহ.) আল্লাহর ভালোবাসা সম্পর্কে লেখেন, ‘সেটা এমন বিষয়, যা নিয়ে বিতর্ককারীরা বিতর্ক করে, জ্ঞানীরা তা অনুসন্ধান করে, অগ্রগামীরা তার প্রতি দ্রুত ধাবিত হয়, প্রেমিকরা তাতে আত্মোৎসর্গ করে, তার স্নিগ্ধতায় আবেদরা সজীবতা লাভ করে। আল্লাহর ভালোবাসায় অন্তরের শক্তি, আত্মার খোরাক ও চোখের প্রশান্তি। সেটা এমন জীবনীশক্তি, যা থেকে যে বঞ্চিত হয় সে যেন প্রকৃতার্থেই মৃত, এমন আলো যে তা হারিয়ে ফেলে সে যেন সমুদ্রের গভীর অন্ধকারে নিমজ্জিত, এমন আরোগ্য যে তা হারিয়ে ফেলে তার অন্তরে বাসা বাঁধে সব ব্যাধি, এমন স্বাদ সে তা আস্বাদন করেনি তার জীবন ব্যথায় পরিপূর্ণ। আল্লাহর ভালোবাসাই ঈমান ও আমলের প্রাণসত্তা। ’ (মাদারিজুস সালিকিন : ৩/৮)
আল্লামা সা’দি (রহ.) বলেন, ‘একত্ববাদ ও তার প্রাণসত্তা হলো একনিষ্ঠভাবে আল্লাহকে ভালোবাসা। ’ (আল-কাউলুস সাদিদ, পৃষ্ঠা ১১৪)