রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক ড. এএফএম রেজাউল করিম হত্যা মামলায় দুই আসামির মৃত্যুদণ্ড এবং তিনজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। মঙ্গলবার দুপুরে রাজশাহীর দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনাল এ রায় দেন। তবে, অভিযোগপত্রভুক্ত আট আসামির মধ্যে তিনজন বিভিন্ন সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন। তারা হলেন- খায়রুল ইসলাম বাঁধন, নজরুল ইসলাম ওরফে হাসান ওরফে বাইক হাসান ও তারেক হাসান ওরফে নিলু ওরফে ওসমান।
এদের মধ্যে খায়রুল ইসলাম ২০১৬ সালে গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় অংশ নিয়েছিলেন। সেদিন সেনাবাহিনীর কমান্ডো অভিযানে অন্য পাঁচ জঙ্গির সঙ্গে তিনি নিহত হন। খায়রুল বগুড়ার শাজাহানপুরের বৃকুষ্টিয়া গ্রামের দিনমজুর আবু হোসেনের ছেলে। আবু হোসেনের দুই মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে খায়রুল ছিলেন সবার বড়।
অধ্যাপক রেজাউল হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) পরিদর্শক রেজাউস সাদিক ঢাকাটাইমসকে জানান, সেনা অভিযানে নিহতের প্রায় বছরখানেক আগে খায়রুল বাড়ি থেকে নিরুদ্দেশ হন। নিখোঁজ অবস্থায় তিনি শিক্ষক রেজাউল হত্যায় সরাসরি অংশ নেন। তদন্তে তার নাম বেরিয়ে আসে। খায়রুল বৃ-কুষ্টিয়া দারুল হাদিস সালাদিয়া কওমি মাদ্রাসায় পড়ালেখা করেছেন। পরে বিহিগ্রাম ডিইউ সেন্ট্রাল ফাজিল মাদ্রাসা থেকে দাখিল পাস করেছিলেন।
এদিকে অধ্যাপক রেজাউল হত্যা মামলায় গ্রেপ্তারের পর আসামি মাসকাওয়াত হাসান সাকিব ১৬৪ ধারায় দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে নজরুল ইসলাম ওরফে হাসান ওরফে বাইক হাসানের জড়িত থাকার কথা বলেন। এই নজরুল ও মূল পরিকল্পনাকারী শরিফুলকে ধরিয়ে দিতে পত্রিকায় ছবিসহ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এক লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছিল আরএমপি। ওই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের চার দিন পর, ২০১৬ সালের ৩১ জুলাই রাজশাহী নগরীর উপকণ্ঠ খড়খড়ি এলাকায় খায়রুল ডিবি পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন।
পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জের পুরোহিত মঠ অধ্যক্ষ যজ্ঞেশ্বর রায়, রংপুরে জাপানি নাগরিক কুনিও হোশি, কাউনিয়া মাজারের খাদেম রহমত আলী, রাবির অধ্যাপক রেজাউল করিম সিদ্দিকীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত মোট ১১টি হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নেন এই নজরুল ইসলাম ওরফে বাইক হাসান। তিনি এসব কিলিং মিশনে মোটরসাইকেল চালকের ভূমিকা পালন করতেন। তাই জেএমবির এই ক্যাডার সংগঠনের সদস্যদের কাছে ‘বাইক হাসান’ নামে পরিচিত ছিলেন।
পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার সোনারহার গ্রামের আব্দুল্লাহ ওরফে মুন্সীর ছেলে নজরুল। মাদ্রাসা থেকে পড়াশোনা করেছিলেন তিনি।
এদিকে অধ্যাপক রেজাউল হত্যা মামলার নিহত আরেক আসামি তারেক হাসান ওরফে নিলু ওরফে ২০১৬ সালের জুনে ঢাকায় পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন। তার সঙ্গে সুলতান মাহমুদ ওরফে কামাল ওরফে রানা নামে আরও এক জঙ্গি নিহত হন। জয়পুরহাটের বাসিন্দা ওসমান ছিলেন জেএমবির উচ্চ পর্যায়ের নেতা। অধ্যাপক রেজাউল করিম হত্যাকাণ্ড ছাড়াও দিনাজপুরের কাহারোলে ইসকন মন্দিরে হামলায় জড়িত ছিলেন তিনি।
২০১৬ সালের ২৩ এপ্রিল সকালে রাজশাহী নগরীর শালবাগান এলাকায় নিজের বাড়ি থেকে মাত্র ৫০ গজ দূরে কুপিয়ে ও গলাকেটে হত্যা করা হয় ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. এএফএম রেজাউল করিম সিদ্দিকীকে। পরের বছরের ৬ নভেম্বর জেএমবির ৮ সদস্যকে অভিযুক্ত করে আদালতে মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ। চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলার রায় ঘোষণা হয়েছে আজ মঙ্গলবার।