প্রকৌশলী হওয়ার খুব ইচ্ছা ছিল আকাশ সরকার জয়ের। এসএসসি পাস করার পর গত কোরবানির ঈদে পোশাককর্মী বাবা-মায়ের কাছে বায়না ধরে মোটরসাইকেল কিনে দেয়ার জন্য।
সন্তানের জেদের কাছে হার মানতে হয় বাবা-মাকে। বাধ্য হয়ে বাড়ি করার জন্য গচ্ছিত টাকা দিয়ে তাকে (আকাশ) অ্যাপাচি আরটিআর মোটরসাইকেল কিনে দেন তারা।
এবার সেই শখের মোটরসাইকেলই আকাশের প্রকৌশলী হওয়ার স্বপ্ন ভঙ্গ করল। শনিবার দুর্ঘটনার কবলে পড়ে লাশ হয়ে বাড়ি ফিরল পাবনার চাটমোহর উপজেলার ধূলাউড়ি গ্রামের বাবলুর রহমান সরকার ও আফরোজা খাতুন দম্পতির ছোট ছেলে আকাশ।
রোববার সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির উঠানে পড়ে আছে দুর্ঘটনায় চুরমার হওয়া সেই মোটরসাইকেলটি। তাতে ছোপ ছোপ রক্তের দাগ। কাঁদতে কাঁদতে চোখের পানি শুকিয়ে গেছে মা আফরোজা খাতুনের। ছেলের কলেজের পরিচয়পত্র বার বার চেয়ে চেয়ে দেখছেন। কোনো কথাই বলতে পারছেন না তিনি।
বাবা বাবলুর রহমান শোকে পাথর হয়ে গেছেন। স্বজন ও পাড়া প্রতিবেশীদের চোখ ছিল অশ্রুসজল।
আকাশ চাটমোহর পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং তৃতীয় পর্বের ছাত্র।
ছেলের জন্য বিলাপ করে আফরোজা খাতুন এ সময় বলছিলেন, ‘আমার ছাওয়াল কলেজে পড়ত। আর দুই বছর গেলেই আমার ছাওয়াল ইঞ্জিনিয়ার হতো। কেন আমি গাড়ি (মোটরসাইকেল) কিনা দিল্যেম। গাড়ি কিনা না দিলি পারে আমার ছাওয়ালডা মরত না।’
স্বজনরা জানালেন, শনিবার সকালে তিনটি মোটরসাইকেলে মোট পাঁচজন বন্ধুকে নিয়ে গুরুদাসপুর উপজেলার বিলসা এলাকায় চলনবিল দেখতে বের হয়েছিল আকাশ। বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চালিয়ে বাড়ি ফেরার সময় বিকালে ৩টার দিকে চাটমোহর উপজেলার ছাইকোলা ইউনিয়নের বাওনবাজার এলাকায় মোটরসাইকেল ও ব্যাটারিচালিত অটোভ্যানের মুখোমুখি সংঘর্ষে গুরুতর আহত হয় আকাশসহ মোট সাতজন।
পরে পাবনা সদর হাসপাতালে নেয়ার পর সন্ধ্যায় মৃত্যু হয় আকাশের। অন্যদের চাটমোহর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
চাটমোহর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শরিফুল ইসলাম যুগান্তরকে জানান, আহতদের মধ্যে আকাশ নামে একজন মারা গেছেন। তবে থানায় কেউ কোনো অভিযোগ দেয়নি।