প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে তিস্তা নদীর পানি ভাগাভাগির ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট কোনো অগ্রগতি না হলেও অভিন্ন নদী ফেনী থেকে ভারতকে পানি দিতে রাজি হয়েছে বাংলাদেশ। দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী, ফেনী নদী থেকে ১ দশমিক ৮২ কিউসেক পানি ত্রিপুরার সাব্রুম শহরে সরবরাহ করা হবে।
পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, মানবিক কারণেই প্রধানমন্ত্রী এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ভারতের জাতীয় নাগরিক তালিকা (এনআরসি) নিয়ে ঘটনাপ্রবাহ কোন দিকে গড়ায়, সেদিকেও বাংলাদেশ নজর রাখছে বলে তিনি জানান।
তিস্তার পানি ভাগাভাগি নিয়ে এবারও কোনো চুক্তি না হলেও অন্য সাতটি অভিন্ন নদীর পানিবণ্টনের জন্য দুই দেশ যে একটি ফ্রেমওয়ার্ক প্রস্তুতে রাজি হয়েছে, সেটাকে ইতিবাচক লক্ষণ বলে মনে করছে সরকার।
পররাষ্ট্র সচিব শনিবার রাতে বিবিসি বাংলাকে বলেন, যেহেতু দুই দেশের যৌথ নদী কমিশন বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু করেছে, তাই তিস্তা নিয়েও আশাবাদী হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে। যৌথ নদী কমিশন প্রায় ৬ বছর পর বৈঠকে বসেছে, আগামী বছর আবার বসবে- তাই আমরা আশা করতেই পারি। তারা সব কমন রিভার (অভিন্ন নদী) নিয়েই কাজ শুরু করেছে। কমিশন শুধু এই অভিন্ন নদীগুলোর পানিবণ্টন না, উন্নয়নের বণ্টন নিয়েও ভাবছে। কারণ সারা বিশ্বেই পানিসম্পদ এখন আলোচনার একেবারে উপরের দিকে। সেই পটভূমিতেই আমরা তিস্তাসহ সব অভিন্ন নদীকেই একটা বৃহত্তর ফ্রেমওয়ার্কে ভাবছি, যেখানে শিপিং থেকে শুরু করে বেসিন ম্যানেজমেন্ট সবকিছু নিয়েই আলোচনা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।
সচিব বলেন, ত্রিপুরাকে ফেনী নদীর পানি দেয়া নিয়ে শহীদুল হক বলেন, সীমান্ত দিয়ে বয়ে চলা ফেনীর পানি পেলে সাব্রুম অঞ্চলের মানুষের পানিকষ্ট মেটে- ভারতের এই অনুরোধের পটভূমিতেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্পূর্ণ মানবিক কারণে ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আমার মনে হয়, মানবিক ইস্যুর সঙ্গে আর কোনো ইস্যুকে মেশানো ঠিক নয়। দক্ষিণ ত্রিপুরার ওই অঞ্চলটাতে খাবার পানি নেই। আর সে কারণেই আমরা পানি দিয়েছি। আর আমরা যদি পানি না দিতাম, তাহলে কি কারবালার মতো হয়ে যেত না, প্রশ্ন করেন তিনি।
বিতর্কিত এনআরসির প্রশ্নে ভারতের কাছ থেকে কতটা উদারতার পরিচয় পাওয়া যাবে, সেই আশঙ্কা অবশ্য রয়েই গেছে। বাংলাদেশ জানিয়েছে, এনআরসির বিষয়টি দুই প্রধানমন্ত্রীর আলোচনাতেও উঠেছিল।
ভারতের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বাদ পড়াদের প্রায় সবাইকে পর্যায়ক্রমে এই তালিকায় ঢোকার সুযোগ দেয়া হবে। কিন্তু শহীদুল হকের স্বীকার করতে দ্বিধা নেই, একদিকে যখন ভারতের কোনো কোনো মন্ত্রী বলছেন অবৈধ বিদেশিদের বাংলাদেশেই পাঠানো হবে, অন্যদিকে দিল্লি এটাকে সম্পূর্ণ তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে দাবি করে- এই ‘স্ববিরোধিতা’ তাদের সংশয়ে ফেলে। সচিব বলছিলেন, এই কন্ট্রাডিকশন যেহেতু আমরা তৈরি করিনি, তাই আমি এটাকে অ্যানালাইজ করতে রাজি না। তবে আমি অপেক্ষা করতে রাজি। আগে ব্রিজটা আসুক, তারপর আমরা সেটা পেরুনোর কথা ভাবব।