মধুপুর আনারসে ভরপুর। আনারসের জন্যই বিখ্যাত টাঙ্গাইলের মধুপুর। হলুদ রঙের টসটসে রসালো আনারস বিক্রির ধুম চলেছে মধুপুরের স্থানীয় হাট বাজারে। এখানে দূরদুরান্ত থেকে আসা আনারস ব্যবসায়ীদের ব্যাপক সমাগম। প্রতিদিন পিক-আপ ও ট্রাক ভর্তি আনারস যাচ্ছে ঢাকায় ও ঢাকার বাইরের বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে। এ বছর টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলায় ছয় হাজার একর জমিতে বিভিন্ন জাতের আনারস লাগিয়েছেন চাষীরা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, লাল মাটির উঁচু টিলা ও সমতল ভূমিজুড়ে আনারসের বাগান। আনারসের সবুজ বাগানে হলুদ পাকা আনারস। আনারস বিক্রি করা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে চাষীরা।
মধুপুর উপজেলায় আনারসের পাইকারি ও খুচরা বিক্রয়ের অন্যতম হাটের নাম জলছত্র। বাইসাইকেল, অটোভ্যান, ও মালবাহী ভ্যান নিয়ে দূরদুরান্ত থেকে আনারস নিয়ে আসে চাষীরা। প্রতিদিন ভোর থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত আনারস বেচা-কেনা হয় এই হাটে। জামালপুর, নরসিংদী, সিলেট, নারায়ণগঞ্জ, বগুড়া, ময়মনসিংহ থেকে বড় বড় ব্যবসায়ীরা আসে আনারস ক্রয় করতে। প্রতিদিন ২৫ থেকে ৩০টি পিকআপ, ৮ থেকে ১০টি বড় ট্রাক ভর্তি আনারস দেশের বিভিন্ন জেলা শহরে যায় বলে জানায় স্থানীয় হাট ইজারাদারের লোকজন ও শ্রমিকরা।
অন্যান্য বছরের চেয়ে এ বছর অনারসের ব্যাপক ফলন হয়েছে বলে জানায় একাধিক আনারস চাষী ও উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা।
উপজেলার গাছাবাড়ি এলাকার হাসান আলী বলেন, ‘আম, কাঁঠাল ও লিচুর কারণে আনারসের খুব একটা চাহিদা নেই। যে ফল ৩০ বা ৪০ টাকা বিক্রি করবো সেই ফলের দাম ২০ টাকাও বলে না। অন্যান্য ফল কমে আসলেই আনারসের চাহিদা ও দাম বাড়বে।’
উপজেলার মাগন্তনগর এলাকার সোলায়মান বলেন, ‘আনারসের প্রতি চারার দাম আগে ছিল এক বা দেড় টাকা, এখন তা ৫/৬ টাকা দিয়ে ক্রয় করতে হয়। করোনার মধ্যে আনারস চাষীরা সরকারিভাবে কোনো অনুদান বা প্রণোদনাও পাই নাই। এ বিষয়ে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছি।’
আনারসের চারা রোপণের ১৮ মাসের পর আনারস বাজারে বিক্রি করা যায়। এই অঞ্চলে দুই জাতের আনারস চাষ করা হয়। একটি ছোট প্রজাতি যার নাম জলডুঙ্গি অপরটির নাম ক্যালেন্ডার। ক্যালেন্ডার ফলটি অনেক সুস্বাদু, মিষ্টি ও দেখতেও চমৎকার।
ঝড়-জলোচ্ছ্বাসে আনারস চাষে কোনো প্রভাব পড়ে না। এছাড়া আনারসের খুব একটা রোগবালাই নেই বললেই চলে। শুধু রোদ্রতাপে আনারসের ক্ষতি হয় বলে জানায় স্থানীয় আনারস চাষীরা।
যদি নতুন কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয় তাহলে আনারস চাষে কৃষক আরও আকৃষ্ট করা যাবে বলে বিশিষ্টজনরা মন্তব্য করেছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আল মামুন রাসেল বলেন, ‘আনারস চাষের জন্যে মধুপুরের মাটি খুব উপযোগী। এখানে পর্যাপ্ত পরিমাণে আনারস চাষ হয়। বর্তমানে এমডি-২ নামের একটি আনারসের নতুন জাত এসেছে। প্রদর্শনী হিসেবে বিনামূল্যে ১০৭ জন চাষীর ১৪ হেক্টর জমিতে সেই চারা লাগানো হয়েছে। অন্যান্য আনারসের তুলনায় এই আনারস ৪ গুণ পুষ্টি ও ভিটামিন সি রয়েছে।’
সুত্র: বিডি প্রতিদিন