সর্বশেষ সংবাদ
Home / মুক্তমত / ভালোবাসলে সঙ্গীর কথা আগে শুনুন

ভালোবাসলে সঙ্গীর কথা আগে শুনুন

ভালোবাসা বাংলা অভিধানের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা শব্দ। হাজার হাজার গল্প, আর্টিকেল, ম্যাগাজিন, সিনেমা শুধুমাত্র এই একটি শব্দকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছে। মনস্তত্ত্বে, ভালোবাসা মুখ্য আবেগীয় চাহিদা। শুধুমাত্র ভালোবাসার কারণে আমরা সাগর পাড়ি দেই, সমুদ্রের তলদেশে যাই, পর্বত জয় করি, মরুভূমি জয় করি। ভালোবাসা পাবার চাহিদা না থাকলে এগুলোর কোনোটাই হতো না। শিশু মনস্তত্ত্বে, প্রত্যেক শিশুর কিছু প্রাথমিক আবেগীয় চাহিদা থাকে। এই চাহিদাগুলো পূরণ হলে সেই শিশুটি পরবর্তীকালে মানসিকভাবে সামর্থ্যবান হয়ে ওঠে। মানুষ ছোটবেলা থেকে বাবা-মায়ের ভালোবাসায় বড় হতে থাকে। সবার মধ্যে ভালোবাসার খালি ট্যাংক থাকে, অন্যের নিকট থেকে ভালোবাসা পেয়ে সবার নিজের সেই ট্যাংক পূরণ করতে চায়। একজন শিশু যথাযথভাবে ভালোবাসা পেয়ে ট্যাংকটি পূরণ করতে পারলে তার সামাজিক ও আবেগীয় যথাযথ বিকাশ হবে এবং ব্যক্তিত্বসম্পন্ন ব্যক্তিতে পরিণত হবে। ছোটবেলার ভালোবাসা ছাড়া বেড়ে উঠলে ব্যক্তির সামাজিক ও আবেগীয় বিকাশ ব্যাহত হয় এবং এতে করে তার মধ্যে অসামাজিক আচরণ এবং আবেগ নিয়ন্ত্রণে সমস্যা দেখা দেয়।

তবে ভালোবাসা শুধুমাত্র শিশুকালের বিষয় না। পূর্ণবয়স্ক এমনকি বিবাহিত ব্যক্তিদের জীবনের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ভালোবাসা। মানব-মনে সবসময় অন্যের জন্য তীব্র ভালোবাসার হরমোন তৈরি হয় এবং সেই ভালোবাসা আদান-প্রদান করতেই পছন্দের কাউকে সঙ্গী হিসেবে বেছে নেয়। বিবাহের মাধ্যমে সামাজিক ও পারিবারিক ভাবে ভালোবাসার স্বীকৃতি মেলে এবং একত্রে থাকতে শুরু করে। সঠিকভাবে ভালোবাসার ভাষা ব্যবহার করতে পারলে তার ভালোবাসা শক্তিশালী হয় এবং দুজনের মধ্যে আকর্ষণ বাড়ে।

ভালোবাসা ও মোহ নিয়ে এক সমীক্ষা পরিচালনা করে মনোবিজ্ঞানী রবিন (১৯৭৩) দেখান যে, নারীর আগে পুরুষ প্রেমে পড়ে, আর নারীরা প্রেম পরে পড়লেও প্রেম থেকে আগে বের হতে পারে। তবে নারীরা প্রেমের মোহে বেশি পড়ে। প্রেমের মোহ নিয়ে কাপলানের গবেষণায় দেখা যায়, মেয়েরা গড়ে ৫.৬ বার ও ছেলেরা গড়ে ৪.৫ বার প্রেমের মোহগ্রস্ত হয়ে পড়ে। তবে প্রেম করার ক্ষেত্রে তারা একই অর্থাত্ ১.২৫ বারের কথা বলেছেন। এসব গবেষণার ভিত্তিতে, ভালোবাসাকে শুধুমাত্র একটি সরল আবেগ না বলে একে জটিল আবেগ হিসাবে চিহ্নিত করা যায়। এই জটিল আবেগের সঙ্গে জড়িয়ে আছে অনেক ধরনের অনুভূতি। ভালোবাসাকে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে মাসলো তার তত্ত্বে অস্তিত্ব প্রদানকারী ভালোবাসা ও নির্ভরশীল ভালোবাসা—এ দুভাগে ভাগ করেছেন। অস্তিত্ব প্রদানকারী ভালোবাসাকে ইতিবাচক ও শুধুমাত্র নিজের উপর নির্ভরশীল ভালোবাসা হিসেবে দেখেছেন। এই ধরনের ভালোবাসার ক্ষেত্রে সঙ্গী কী করল তার ওপর নির্ভর না করে নিজেকে বিকশিত করেন এবং নির্ভরশীল ভালোবাসা হলো নেতিবাচক ও চাহিদার জন্য সঙ্গীর ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়া। সমাজ মনোবিজ্ঞানী স্টেনবার্গ তার তত্ত্বে, ভালোবাসার তিনটি বৈশিষ্টে্যর কথা বলেছেন, এগুলো হলো অন্তরঙ্গতা, তীব্য অনুভূতি (প্যাশন) এবং দায়বদ্ধতা। সম্পর্কে অন্তরঙ্গতা তৈরি হয় আবেগীয় সহায়তা আদান-প্রদান ও ভালোবাসার মানুষটির চাহিদার প্রতি সম্মান দেখানোর মাধ্যমে। সম্পর্কে অন্তরঙ্গতার মাধ্যমে ভালোবাসার মানুষটির ব্যক্তিগত উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। প্যাশন হলো তীব্র আবেগীয় অনুভূতি। এই ধরনের অনুভূতির মাধ্যমে ব্যক্তি নিজের যৌন চাহিদা, আত্মতুষ্টি ও আত্মমর্যাদা পূরণ করতে চায়। এই ধরনের আবেগের পরিণতি ইতিবাচক ও নেতিবাচক দুই ধরনেরই হতে পারে। আর দায়বদ্ধতা (কমিটমেন্ট) হলো সব প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে, সঙ্গীর সঙ্গে ভালোবাসার সম্পর্কটি চালিয়ে যাওয়া। এই তিনটি বিষয়ের কোনোটি না থাকা মানে আপনি ভালোবাসাহীন জীবনযাপন করছেন।

ভালোবাসার অন্যতম প্রধান উপাদান হলো সঙ্গীকে গুণগত সময় দেওয়া। এই সময় একজন আরেকজনের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে বিষয়টি এমন নয়, মূল বিষয় হলো একইসঙ্গে একই কাজ করা ও একজন আরেকজনের প্রতি মনোযোগ দেওয়া। গুণগত সময়ের মূল বিষয় হলো মনোযোগ দিয়ে শোনা। সবাই আমরা বলতে পছন্দ করি, কিন্তু শোনার ক্ষেত্রে ট্রেনিং দরকার। শোনার দক্ষতা বাড়ানো ছাড়া ভালোবাসা বাড়ানো যায় না। গুণগত সময় দেওয়ার সময় নিচের কৌশলগুলো ফলো করতে পারেন আপনার সঙ্গী কথা বললে তার দিকে তাকিয়ে থাকুন। মনকে স্থির করে এমনভাবে যোগাযোগ করুন যেন আপনি তাকে সম্পূর্ণ মনোযোগ দিচ্ছেন।

মনে রাখতে হবে গুণগত সময়ে সঙ্গীকে নিরবচ্ছিন্ন মনোযোগ দিতে হবে। আপনি যদি খুব আগ্রহ সহকারে কোনোকিছু দেখেন, পড়েন বা লেখেন কিংবা খুব মনোযোগ দিয়ে কোনো কাজ করেন যেখান থেকে খুব তাড়াতাড়ি মনোযোগ সরাতে পারবেন না, তাহলে আপনার সঙ্গীকে সত্যিটি বলুন। আপনি বলতে পারেন যে, বর্তমানে সময় দিতে পারছি না, কিছু সময় পরে তোমার কথা খুব মনোযোগ সহকারে শুনব। গুণগত সময়ে দুজনে একত্রে মিলে কোনো মজার গল্প করতে পারেন। সপ্তাহে একদিন আশেপাশে ঘোরার জন্য ঠিক করুন, সেই সময়ে শুধু দুজনকেই সময় দিন। জীবন হোক ভালোবাসাময়। শুভ ভালোবাসা দিবস।

লেখক: ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট

About admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

x

Check Also

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও আমাদের করণীয়

বর্তমান সময়ে চায়ের দোকান থেকে শুরু করে নামিদামি পত্রপত্রিকা কিংবা অন্যান্য মাধ্যমে ...