ঋণের ওপর জ্যামিতিক হারে সুদ আরোপের সংস্কৃতি (কালচার) থেকে ব্যাংকগুলোকে বেরিয়ে আসতে হবে। সুদ কমানোর ব্যাপারে সরকার যেভাবে নির্দেশ দেবে ব্যাংকগুলোকে তা মেনে চলতে হবে। যদি মেনে না চলে তাহলে ব্যাংকগুলোকে একত্রীকরণ (মার্জার) করা হবে।
বুধবার ক্রয় ও অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এসব কথা বলেন।
বৈঠক শেষে অর্থনীতির বিভিন্ন দিক নিয়ে অর্থমন্ত্রী আলোচনা করেন এবং প্রশ্নের উত্তর দেন। এ সময় অর্থমন্ত্রীর দৃষ্টি আর্কষণ করে বলা হয়, ঋণের ওপর সুদ আরোপের ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো কমপোনেন্ট সুদ থেকে বের হতে চাচ্ছে না।
জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, কেন চাইবে না। ব্যাংক অনুমোদন দিয়েছে সরকার। সরকার যেভাবে নির্দেশ দেবে সেভাবে চলতে হবে। যদি না চলে তাহলে ব্যাংকগুলোকে মার্জার করে দেয়া হবে। সরকার ব্যাংকের অনুমতি দিতে পারে, আবার তা ফেরতও নিতে পারে। সরকারের হুকুম না মেনে দেশে কোনো প্রতিষ্ঠান থাকতে পারে কিনা পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, এটি হতেই পারে না। একটা ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ঋণ পুনঃতফসিলসংক্রান্ত বিষয় আদালতে বিচারাধীন। আমি এ বিষয়ে কথা বলব না। আশা করি এটি শিগগিরই শেষ হবে। তবে সেখানে কয়েকটি উপকরণ আছে। বিশেষ করে সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিট করা হবে। কমপোনেন্ট সুদ হার করা হবে না। ব্যবসায়ীরা যাতে ভালোভাবে চলতে পারেন এ জন্য সিঙ্গেল ডিজিট সুদ করা হবে। ব্যাংকগুলোকে বহুবার বলা হয়েছে। তারা সুদের হার নির্ধারণ করে ১৫ থেকে ১৬ শতাংশ। একাধিক ব্যক্তি এ অভিযোগ নিয়ে এসেছেন আমার কাছে। সুদহার নিয়ে সাংবাদিকদের জানা দরকার। এর ভেতরে যাওয়া দরকার।
উদাহরণ টেনে অর্থমন্ত্রী বলেন, আপনি ১০ বছরের জন্য ব্যাংক থেকে ১০০ টাকা ঋণ নেবেন। মেয়াদ শেষে সুদসহ ১৫০ টাকা ফেরত দেবেন। কিন্তু ১৫০ টাকা ফেরত দেয়ার পরও আপনার কাছে ২০০ টাকা পাবে ব্যাংক। এটি জীবনেও শোধ হয় না। শোধ না হওয়ার কারণ হল আপনি কিস্তি পরিশোধ করতে গেলে সে টাকা দিয়ে সুদ সমন্বয় করা হয়। সুদ শেষ হয় না, ঋণও শেষ হয় না। এসব নিয়ে আমাদের আগেই কাজ করা দরকার ছিল।
জানা গেছে, সর্বোচ্চ সুবিধা দিয়ে মে মাসে ঋণ খেলাপিদের জন্য বিশেষ নীতিমালা জারি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। মাত্র ২ শতাংশ এককালীন নগদ জমা (ডাউন পেমেন্ট) দিয়ে ১০ বছর মেয়াদে ঋণ পুনঃতফসিল ও এককালীন এক্সিট বা সম্পূর্ণরূপে পরিশোধের বিশেষ সুবিধা পাচ্ছেন খেলাপিরা। এ সুবিধার আওতায় নতুন করে ব্যবসা শুরু করতে সরকারের সহায়তা চেয়েছে হলমার্ক গ্র“প।
জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, হলমার্ক টাকা দেবে। হলমার্কসহ অনেকে টাকা দিয়ে ব্যবসায় ফিরে আসবে। নতুন করে ব্যবসায়ী সৃষ্টি করতে পারব না। সুতরাং তাদের দিয়ে ব্যবসা করাতে হবে। তাদের বাইরে ও ভেতরে রাখা উভয়খানেই বিপদ। চাইব টাকা পরিশোধ করুক। সুন্দরভাবে জীবনযাপন করুক। ব্যবসা করতে হলে আমাদের পাওনা টাকা শোধ দিতে হবে। তাদের ক্ষমতা আছে কিনা জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, সক্ষমতা আছে। ব্যবসায়ীরা কখনোই শেষ হয়ে যান না।
হলমার্কের ফ্যাক্টরি সব অচল এমন প্রশ্নের উত্তরে অর্থমন্ত্রী বলেন, ফ্যাক্টরির নিচে গোল্ড আছে সেটি দেখতে হবে। হলমার্কসহ অন্য ব্যবসায়ীদের নিয়ে আসার ব্যাপারে নতুন ব্যবস্থাপনা কী হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নতুন ব্যবস্থাপনা হলে জানতে পারবেন। ভারতে অনেক ব্যাংক একত্র করা হচ্ছে।
এ থেকে সরকার আমাদের ব্যাংক নিয়ে কিছু ভাবছে কিনা জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, সরকার ব্যাংক করেছে মুনাফার করার জন্য, সেবার জন্য। সেবার ক্ষেত্রে ঘাটতি হলে মার্জারের চিন্তা করব। কিন্তু সরকার সরাসরি যেসব কাজের নির্দেশ দেয় সেটি করতে গিয়ে মুনাফা নাও করে সে জন্য মার্জার করা হবে না।