ডেস্ক রিপোর্ট: বেসরকারি ফারমার্স ব্যাংকে টাকা রেখে বিপদে পড়েছে বাংলাদেশ বিদ্যুত্ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। জমা রাখা টাকা ফেরত পাচ্ছে না রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি। বাংলাদেশ ব্যাংকের শরণাপন্ন হয়েও মিলছে না আমানতের টাকা। ফলে চলতি গ্রীষ্ম মৌসুমে বিদ্যুত্ উত্পাদনের জন্য দরকারি জ্বালানি তেল কিনতে প্রয়োজনীয় অর্থ না পেয়ে সংকটে পড়েছে পিডিবি। শিগগিরই টাকা না পেলে বিদ্যুত্ লোডশেডিং পরিস্থিতি তীব্র হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ফারমার্স ব্যাংকের দুইটি শাখায় ৫টি স্থায়ী আমানত হিসেবে সুদ-আসলসহ জমা প্রায় ৬০ কোটি টাকা তুলতে চায় পিডিবি। স্বল্প মেয়াদের জন্য জমা রাখা ওই টাকা নগদায়ন করতে পিডিবি কয়েক দফা চিঠি দেয়। কিন্তু ঋণ খেলাপ ও নানা অনিয়মের কারণে অর্থ সংকটে পড়া ব্যাংকটির কর্তৃপক্ষ এখনই টাকা দেওয়া সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দেয়। ব্যাংকটির সঙ্গে কয়েক দফায় আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক আলোচনার পর টাকা না পেয়ে পিডিবি বাংলাদেশ ব্যাংকের হস্তক্ষেপ চেয়ে চিঠি দিয়েছে। তাতেও সাড়া মিলছে না।
পিডিবির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী খালেদ মাহমুদ বলেন, এই মুহূর্তে আমাদের নগদ অর্থের প্রয়োজন বেশি। প্রয়োজনের সময় টাকা না পেয়ে বিল পরিশোধে সমস্যা হচ্ছে। এটি দীর্ঘায়িত করা সম্ভব নয়। তেল কেনা ও বিদ্যুত্ উত্পাদকদের কাছ থেকে বিদ্যুত্ কিনে তা বিতরণকারীদের কাছে পৌঁছে দিতে অনেক টাকা দরকার। নির্দিষ্ট সময়ে টাকা পেতে ফারমার্স ব্যাংককে একাধিকবার চিঠি দিয়েছি। এখন বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংককে জানিয়েছি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সহযোগিতা-হস্তক্ষেপে সংকট মেটানো যাবে বলে আশা করছি। পিডিবির এক সদস্য বলেন, সরকারের সবচেয়ে বেশি লোকসানি প্রতিষ্ঠান পিডিবি। প্রতি মাসে পিডিবির রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ২ হাজার ১০০ কোটি টাকা থেকে ২ হাজার ২০০ কোটি টাকা। আর প্রতিমাসে খরচ ২ হাজার ৪৫০ থেকে ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এতে প্রতিমাসে পিডিবির ঘাটতি থাকে ৩৫০ কোটি থেকে ৪০০ কোটি টাকা। গ্রীষ্ম মৌসুমে এ ঘাটতি আরো বাড়ে। পিডিবির হাতেও নগদ অর্থের সংকট রয়েছে। এ অবস্থায় ফারমার্স ব্যাংকে জমা রাখা পিডিবির নিজের টাকা না পাওয়ায় ‘বড় বিপদে’ পড়তে যাচ্ছে পিডিবি। এই ‘বিপদে’র কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, বর্তমানে বিদ্যুতের প্রকৃত চাহিদা সাড়ে ১৩ হাজার থেকে ১৪ হাজার মেগাওয়াট। স্থাপিত কেন্দ্রগুলোর মোট ক্ষমতা প্রায় ১৪ হাজার মেগাওয়াট। কিন্তু জ্বালানি সংকট ও কেন্দ্রগুলোর সক্ষমতা কমে যাওয়ায় সরকার সরবরাহ করতে পারছে ৯ থেকে ১০ হাজার মেগাওয়াট। কাগজে-কলমে লোডশেডিং না থাকলেও প্রকৃতপক্ষে প্রতিদিন প্রায় ৩ হাজার মেগাওয়াট লোডশেড করতে হচ্ছে। গ্যাস সংকটের কারণে চাইলেও গ্যাসভিত্তিক কেন্দ্রগুলো পুরোদমে চালু রাখা যাচ্ছে না। তাই পরিস্থিতি সামাল দিতে তেলচালিত কেন্দ্রগুলোতে উত্পাদন বাড়াতে হবে। এ জন্য দরকার তেল। কিন্তু সময়মতো নগদ টাকা না পেলে সেই তেল কেনা যাবে না। প্রয়োজনীয় বিদ্যুত্ উত্পাদনেও বড় বাধা তৈরি হবে। বাড়বে লোডশেডিং।
১৫ এপ্রিল বাংলাদেশ ব্যাংকে দেওয়া চিঠিতে বলা হয়, ফারমার্স ব্যাংকের গুলশান কর্পোরেট শাখা এবং ইমামগঞ্জ শাখায় ২০১৫ সালে প্রাথমিক বিনিয়োগ করে পিডিবি। গুলশান কর্পোরেট শাখায় রাখা দুই আমানত হিসেবের সর্বশেষ মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ ছিল যথাক্রমে গত ২৫ ও ২৮ ফেব্রুয়ারি। তেল কেনা, ঋণ পরিশোধ এবং আইপিপি ও রেন্টালসহ বিভিন্ন বিল পরিশোধের বাধ্যবাধকতা থাকায় দুই হিসেবে থাকা টাকা তুলতে চায় পিডিবি। কিন্তু নগদায়নে অপারগতা প্রকাশ করে এবং পরবর্তী মেয়াদপূর্তি পর্যন্ত নবায়নের অনুরোধ করে ব্যাংক। কিন্তু বিল পরিশোধের বাধ্যবাধকতা থাকায় পুনরায় নগদায়নের জন্য তাগিদপত্র পাঠানো হলেও ফারমার্স ব্যাংক ফের অপারগতা প্রকাশ করে এবং পরবর্তী মেয়াদপূর্তি পর্যন্ত নবায়নের অনুরোধ করে।
ফারমার্স ব্যাংকের ইমামগঞ্জ শাখায় বিনিয়োগকৃত তিনটি স্থায়ী আমানত হিসেবের মধ্যে দুইটির মেয়াদপূর্তির তারিখ ছিল ২৩ এবং একটির ২৫ মার্চ। এরপর ব্যাংকটির ইমামগঞ্জ শাখা তাদের বর্তমান সংকটের কথা উল্লেখ করে টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করে চিঠি দেয়। পরবর্তীতে ব্যাংকটির দুইটি শাখাতেই যোগাযোগ করা হলেও এখন পর্যন্ত কোনো আমানতেরই নগদায়ন করেনি অর্থাত্ টাকা ফেরত দেয়নি।
এ প্রসঙ্গে বিদ্যুত্ উন্নয়ন বোর্ডের পরিচালক (অর্থ) মো. নুরুল আলম গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের হস্তক্ষেপ চেয়ে আমরা ফের যোগাযোগ করবো।
আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীরের মালিকানাধীন ফারমার্স ব্যাংক নানা অনিয়মের কারণে কয়েক বছর ধরেই ধুঁকছে। ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত ব্যাংকটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব সম্প্রতি ছেড়ে দেন মহীউদ্দীন খান আলমগীর। তিনি বর্তমান সংসদে সরকারি হিসাব কমিটির সভাপতি।
পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় এবং চট্টগ্রাম বন্দরসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানেরও বিপুল অর্থ ব্যাংকটিতে জমা রয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি সংস্থা সম্প্রতি টাকা ফেরত চেয়েও তা পায়নি।