নেত্রকোনা প্রতিনিধিঃ দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর আবারো বাড়ছে নেত্রকোনার কলমাকান্দা ও দুর্গাপুর সীমান্তে গরু,সুপারী,সহ মাদকদ্রব্যের চোরাচালান। সক্রিয় হয়ে ওঠেছে সীমান্তের চোরাচালানকারীরা। ভারত থেকে দুই উপজেলার বিভিন্ন পাহাড়ের পাশ কাটিয়ে চোরাকারবারীরা তাদের কাজ করে প্রশাসনের নাকের ডগায়, পাঁচ গাঁও,লেংগুড়া,খারনৈ,ও দুর্গাপুর উপজেলার ভবানীপুর,বারমারী,ও বিজয়পুর এলাকার সীমান্ত দিয়ে বাড়ছে গরু ও মাদকদ্রব্য পাচার। এতে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন এসব এলাকায় বসবাসকারী স্থানীয় বাসিন্দারা।
সোমবার (৭ নভেম্বর) সরেজমিন গেলে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে ওঠে আসে এমন তথ্য।
বিশেষ সূত্রে জানা যায়, কলমাকান্দা ও দুর্গাপুর উপজেলার সীমান্তঘেষাঁ গ্রামগুলোর পাশে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের সীমানা। এখানে সীমানা পিলারের জিরো পয়েন্টে ভারতের কাটাতারের বেড়ার নিচে বিভিন্ন স্থানে রয়েছে গোলাকৃতির কালভার্টের ফাঁক। যেখানে কাঁটাতারের বেড়া শেষ সেখানে খোলা অংশ। কোথাও নদী বা নদীর ওপর ব্রিজ। এসব কালভার্ট, খাল আর ব্রিজের ফাঁকা স্থান ব্যবহার করে চোরাকারবারিরা। বিএসএফ ও বিজিবির চোখ ফাঁকি দিয়ে এসব পথ দিয়ে চোরাকারবারীরা আনছে গরু ও মাদক দ্রব্য।
চোরাই পথে আসা এসব গরু বেচাকেনা হচ্ছে স্থানীয় সীমান্ত এলাকা বিভিন্ন, গ্রামের বাজারে। ওইসব গ্রামের বাসিন্দারা জানান, প্রায় ৩-৪ মাস যাবত ভারতের বিএসএফের চোখ ফাঁকি দিয়ে চোরাই পথে আসছে গরু আর মাদকদ্রব্য। সপ্তাহের শনিবার দিবাগত ভোররাতেই বেশি আসে গরু। এজন্য ওইসব গ্রামে প্রতি শনিবার সন্ধ্যা হতে জড়ো হতে থাকে পাইকাররা। বেচাকেনা হয় সীমান্ত ঘেঁষা ওইসব গ্রামে। এর পর পাহাড়ি পথ বেয়ে নিয়ে আসা হয় কলমাকান্দা ও গুতুরা সহ বিভিন্ন বাজারে। গরুর সঙ্গে আসছে মাদকদ্রব্য। এসব বিক্রি হয় সিক্রেট। তবে মাদক ব্যবসায়ীদেরও আনাগোনা প্রকাশ্যেই।
বিশেষ সূত্রে জানা যায়, এসব চোরাচালানের সঙ্গে সরাসরি জড়িত আওয়ামী লীগ নাম দারি কিছু নেতা তারা আওয়ামী লীগের নাম বিক্রি করে এই ব্যবসা করে আসছেন।
এদের মধ্যে অনেকেই মাদক ও গরুসহ একাধিকবার পুলিশ ও বিজিবির হাতে আটক হয়েছিল। জেলও খেটেছে। এ ব্যাপারে কথা হয় লেংগুরা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি সিদ্দিকের সাথে। তিনি বলেন, এখানে অনেকেই ভারতের চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত। তাদের জিজ্ঞেস করলে তারা শুধু আমার নাম বলে। আমি এখন আর বর্ডারে যাইনা। এ ব্যাপারে অন্যদের সঙ্গে ফোনে বা সরাসরি যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।
কলমাকান্দা উপজেলার লেঙ্গুড়া ইউনিয়নের কালোপানি সীমান্ত ছড়া ১১৭১-৭২ পিলার পয়েন্ট দিয়ে প্রতিদিন টনের টন সুপারি বাংলাদেশ থেকে ভারতে প্রচার করছে কিছু অসাধু চোরাচালানকারীরা। রবিবার(৬ নভেম্বর) দুপুরে কালোপানি এলাকায় ঘুরতে গিয়ে এই দৃশ্য চোখে পড়ে। আমার কাছে এই দৃশ্যটা অদ্ভুত মনে হলে আমি পাহাড়ের চূড়ায় বসে বসে মোবাইল ফোনে ভিডিও ধারণ করি। দুর থেকে বুঝা যাচ্ছিল না এত লোক মাথায় বহন করে কি নিয়ে যাচ্ছে, ধান না সুপাড়ী, কাছে গিয়ে কয়েকজন সুপাড়ী বহনকারীকে জিজ্ঞেস করলে তারা জানায়, এগুলো সুপাড়ী ভারতে যাচ্ছে।
ছড়া থেকে আরেকটু দুরে তাকিয়ে দেখি কয়েকজন সুপাড়ীর মাহাজন লেঙ্গুড়া ইউনিয়নের গৌরিপুর এলাকার সবুজ মিয়া, ফুলবাড়ি এলাকার রফিকুল, শুভ্র বনিক, রমজান, গফুর, ইয়াসিন, জহিরুল, তারা সুপাড়ী বহনকারীদের নির্দেশ দিচ্ছে তোমরা তাড়াতাড়ি করো বিজিবি এসে পড়বে। সেখান থেকে আনুমানিক এক গজ দুরে সীমান্ত পিলার নং ১১৭২ পয়েন্টে বিজিবি টহল দিচ্ছে। অথচ বিওপির নাকের ডগা দিয়ে প্রতিদিনেই এই চোরাচালান কারবারীরা টনের টন সুপারি এপার থেকে ওপারে প্রচার করছে, বিজিবি যেনো নিরব ভূমিকায়।
আরেক সূত্রে জানা যায়, সীমান্তের চোরাচালানের নিয়ন্ত্রণ করছে লেংগুরা বর্ডারের সবুজ মিয়া। ফলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সীমান্তে প্রবেশ করলেই মোবাইল ফোনে সতর্ক করে দেয়। ফলে নির্ভয়েই ব্যবসা করছেন চোরাচালানকারীরা। বিনিময়ে এ দুজন তাদের কাছ থেকে গরু প্রতি নেয় দুই শ থেকে তিন শ টাকা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গরু চোরাচালানকারী জানান, হুন্ডির মাধ্যমে ভারতে টাকা পাঠানো হয়। সেখান থেকে নিয়ে আসা হয় গরু ও মাদকদ্রব্য। এতে রয়েছে জীবনের ঝুঁকি। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর মামলা মোকদ্দমায় অনেকে এলাকা ছাড়া। তবুও থেমে নেই গরু চোরাচালান আর মাদক ব্যবসা।
লেংগুরা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান জানান, এখানে স্থানীয় কয়েকজন জড়িত আছে। এছাড়া গৌরীপুর,, ফুলবাড়িয়া, থেকে অনেকে আসে। তাদেরকে নিষেধ করলেও তারা মানে না।
এ ব্যাপারে লেংগুরা বিজিবি ক্যাম্প ইনচার্জের সাথে বারবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।