কৃষি সংবাদঃ সিরাজগঞ্জ ও পাবনার যমুনা ও পদ্মা নদীর বুকে জেগে ওঠা প্রায় ১৯০টি চরে চলতি মওসুমে ৩৭ হাজার একর জমিতে ৬১ হাজার মেট্রিকটন বাদাম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এ মৌসুমেও বাদামের বাম্পার ফলনের আশা করছেন চাষিরা। বাদাম চাষ করে চরের প্রায় ২৫ হাজার ভূমিহীন বর্গাচাষি ভাগ্য পরিবর্তন করেছেন। এই দুই জেলার দক্ষিণ ও পূর্ব পাশ দিয়ে প্রবাহিত যমুনা ও পদ্মার চরে এ বছর বাদাম চাষ করেছেন প্রায় ৩২ হাজার চাষি। যমুনা ও পদ্মা নদীর ভাঙনে সিরাজগঞ্জ ও পাবনার বিভিন্ন গ্রামের প্রায় ৪১ হাজার পরিবার মানবেতর জীবনযাপন করে আসছিল। বাদাম চাষ করে নদীভাঙা মানুষের মুখে এখন হাসি ফুটেছে।
সিরাজগঞ্জ ও পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, গত বছর চরাঞ্চলের পলিযুক্ত বেলে-দোআঁশ মাটিতে ২৯ হাজার একর জমিতে সাড়ে ৪৭ হাজার মেট্রিকটন বাদাম উৎপন্ন হয়। বাদাম চাষ করে চরাঞ্চলের ২৫ হাজার ভূমিহীন বর্গাচাষি পরিবারে এসেছে সচ্ছলতা। বাদামের বাম্পার ফলন ও ভালো দাম পাওয়ায় চাষিরা লাভবান হয়েছেন।
চলতি মৌসুমে গত বছরের চেয়ে ৮হাজার একর বেশি জমিতে বাদাম আবাদ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবারো বাদামের বাম্পার ফলন হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন কৃষি অধিদফতরের কর্মকর্তারা।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, সিরাজগঞ্জ ও পাবনা জেলার যমুনা ও পদ্মার বুকে জেগে ওঠা নাটুয়ারপাড়া, ঘোড়াগাছা, রেহাইশুড়িবেড়, পানাগাড়ী, চরপানাগাড়ী, তেকানী, খাসরাজবাড়ী, যুক্তিগাছা, মাজনাবাড়ী, শালগ্রাম, শালদহ, চরছিন্না, চরগিরিশ, রঘুনাথপুর, নিশ্চিন্তপুর, শুভগাছা, মাইজবাড়ী, পীরগাছা, সানন্ধা, চরপেচাকোলা, চরআড়ালিয়া, সাঁড়াশিয়া, চরসাফুলা, চরনাগদা, চরঢালা, চরকল্যাণপুর, পূর্বশ্রীকণ্ঠদিয়া, পদ্মারচর, বাইরচর, শ্রীপুর, খিদ্রদাশুরিয়া, মুরাদপুর, বরাংগাল, ঘোড়জান, কোমরপুর, বীরপুর, পীরপুর, চালাকপাড়াসহ ছোট-বড় ১৯০টি চরের ৩৭ হাজার একর জমিতে বাদাম চাষ হয়েছে। বাদাম চাষিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, চরাঞ্চলে বাদাম চাষের সম্ভাবনার পাশাপাশি রয়েছে নানা সমস্যা। বীজসস্কট বাদাম চাষের প্রধান সমস্যা।
চাষিরা স্থানীয়ভাবে দেশি পদ্ধতিতে বাদামবীজ সংরক্ষণ করায় অনেক সময় ভালো ফলন পাওয়া যায় না। চরাঞ্চল হওয়ায় বাদাম চাষে কৃষি বিভাগের পৃষ্ঠপোষকতা ও সহযোগিতা পাওয়া যায় না বলে বাদাম চাষিরা অভিযোগ করেন।
সিরাজগঞ্জ ও পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কর্মকর্তা ও কাজিপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মামুনুর রহমান জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকা ও সময়মতো বৃষ্টি হওয়ায় এ বছর বাদামের দানা পুষ্ট হচ্ছে। এ বছর বাদাম গাছে তেমন কোনো রোগবালাইয়ের আক্রমণ নেই। ফলে এ অঞ্চলে বাদামের বাম্পার ফলন হবে বলে তিনি আশা করেন।