চলতি শিক্ষাবর্ষে মাধ্যমিক স্তরের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে শুরু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। কিন্তু শিক্ষকদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ও বিভিন্ন সিদ্ধান্তে সমন্বয়হীনতার কারণে নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে নানা শঙ্কায় অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা। শিক্ষকদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের অভাব ও মূল বই থেকে ধারণা না পাওয়ায় বিকল্প হিসেবে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা ঝুঁকছে সহায়ক বইয়ের দিকে। আমিরুল ইসলাম নামে এক অভিভাবক বলেন, সহায়ক বই খুঁজে নিয়েছি। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষকরা ক্লাসে পড়াতে পারছেন না। এছাড়া মূল পাঠ্যবই থেকেও আমরা কোন ধারণা পাচ্ছি না। তাই সহায়ক বই কিনেছি।
গত কয়েক দিন ধরে বিভিন্ন বইয়ের দোকানে অভিভাবকদের ভিড় দেখা গেছে। দোকান মালিকরা বলছেন, বছর শুরুর দুই মাস পর ‘সহায়ক’ বই আসছে। এ কারণে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা এখন বইয়ের দোকানে এসে বই কিনছেন।
গত ১ জানুয়ারি থেকে প্রাথমিকের প্রথম এবং মাধ্যমিকের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রমের বাস্তবায়ন শুরু হয়। ২০১৪ সালে দ্বিতীয়, তৃতীয়, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম শুরু হবে। পর্যায়ক্রমে দ্বাদশ শ্রেণিতে ২০২৭ সালে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। নতুন শিক্ষাক্রমে বদলে গেছে পুরো পাঠ্যবই। মূল্যায়নেও আসছে বড় পরিবর্তন। নতুন কারিকুলামে ষষ্ঠ ও ৭ম এই দুই শ্রেণিতে শিখনকালীন মূল্যায়ন হবে ৬০ শতাংশ আর সামষ্টিক মূল্যায়ন হবে ৪০ শতাংশ। এছাড়া প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত কোন পরীক্ষা হবে না। বিদ্যালয়ে বছরব্যাপী শিখন কার্যক্রম চলাকালীন শিক্ষার্থীদের শিখন অগ্রগতি এবং আচরণের নানামুখী বিকাশ সম্পর্কে জানার জন্য ধারাবাহিকভাবে যাচাই করা হবে, যা শিখনকালীন মূল্যায়ন। আর বছর শেষে একবার পরীক্ষা হবে যেটি সামষ্টিক মূল্যায়ন।
শিক্ষাক্রমের এই ব্যাপক পরিবর্তনে শুরু থেকেই নানা প্রশ্ন ওঠে। জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে পাঁচ প্রশিক্ষণ পান শিক্ষকরা। এর আগে প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। কিন্তু এই প্রশিক্ষকদের যোগ্যতা নিয়ে নানা প্রশ্ন ওঠে। প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়া সাধারণ শিক্ষকরা বলেছেন, যারা তাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছেন তাদেরও জানার অনেক ঘাটতি ছিল। তথ্য অনুযায়ী, দেশে ১ কোটি শিক্ষার্থী কিন্ডারগার্টেনে পড়ে। যেখানে ১০ লাখের মতো শিক্ষক রয়েছেন। যারা এখনো প্রশিক্ষণের বাইরে। এমন পরিস্থিতিতে সহায়ক বইয়ের প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করেন অভিভাবকরা।
বিদ্যমান আইনে নোট গাইড বাজারজাত করা নিষিদ্ধ। একই সঙ্গে কোনো স্কুলে এসব বই পাঠ্য না করারও নির্দেশনা রয়েছে শিক্ষা বিভাগের। প্রস্তাবিত শিক্ষা আইনের খসড়ায়ও নোট-গাইড বই মুদ্রণ, বাঁধাই, প্রকাশ বা বাজারজাত নিষিদ্ধ রাখা হচ্ছে। কেউ এই বিধান লঙ্ঘন করলে জেল-জরিমানা ভোগ করতে হবে। তবে সরকারের অনুমোদন নিয়ে সহায়ক বই, বাঁধাই, প্রকাশ বা বাজারজাত করা যাবে।
পাঠ্যপুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সহ-সভাপতি শ্যামল পাল বলেন, বাজারে যে বইগুলো পাওয়া যাচ্ছে তা নোট গাইড নয়। এগুলো সহায়ক বই। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সহায়ক বই রয়েছে। এই বই সবার উপকারে আসে। সে আলোকেই আমরা দীর্ঘদিন ধরে সহায়ক বই প্রকাশ করে আসছি। এ সংক্রান্ত কোনো বিধিবিধান থাকলে সেটা আমরা মেনে নেব।
পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির অপর এক নেতা জানান, প্রথম দুই মাসে আমরা কোনো সহায়ক বই প্রকাশ করিনি। তবে বই প্রকাশের জন্য অভিভাবক, শিক্ষক এমনকি শিক্ষকদেরও অনেক অনুরোধ আমরা পেয়েছি। সহায়ক বই নতুন কারিকুলামের আলোকেই তৈরি করা হয়েছে। মূল বইয়ের পাশাপাশি এই বই শিক্ষার্থীদের অনেক উপকারে আসবে। নোট গাইড আর সহায়ক বই এক নয়। আমরা কোনো নোট গাইড প্রকাশ করছি না। প্রকাশ করছি সহায়ক বই।
আজিজুল ইসলাম নামে এক শিক্ষক বলেন, নোট-গাইড নিষিদ্ধ করা সরকারের একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। সহায়ক বই তৈরির কথা বলা হয়েছে। সহায়ক বই থাকতেই হবে কেননা এনসিটিবির কোনো একটি বই দিয়েই ঐ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের জ্ঞানচর্চার পুরোটা সম্পন্ন হবে—এমনটা বলা যায় না।