মিলন হেমব্রম, গোদাগাড়ী (রাজশাহী) প্রতিনিধি: গত ০২/০৭/২০২৩ ইং তারিখ রবিবার ১৬৮তম সাঁওতাল বিদ্রোহ দিবস উদযাপিত উপলক্ষে সমাবেশ ও সংস্কৃত অনুষ্ঠান হলো রাজশাহী জেলার উপজেলার পিপরা গ্রামে । বীর শহীদ সিদু-কানহু চাঁদ-ভাইরো-ফুলমনি অন্যান্যদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয় এবং বেদিতে শ্র্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করা হয়। এবং মহান সাঁওতাল বিদ্রোহ দিবস উপলক্ষে আলোচনা করা হয়।
পিপরা গ্রামে আয়োজনে সম্পর্ক সমাজকল্যাণ সংস্থা সহযোগিতায় দিন ব্যাপী এ অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করছেন গুবিন বাস্কি গ্রাম প্রধান পিপরা গ্রাম।
উপস্থিত ছিলেন, মানিয়েল বেসরা সহকারী শিক্ষক, চন্দন কোঠা উচ্চ বিদ্যালয়, উপস্থিত ছিলেন, গোপাল দেব শর্মা, সভাপতি সম্পর্ক সমাজ কল্যাণ সংস্থা কামারগা, তানোর। শ্রী কান্তন হাসদা জোক মাঝি, প্রদীপ হেমব্রম , আরো উপস্থিত ছিলেন শ্রীমতি রাসেদা মার্ডি সমাজসেবা সংগঠন সদস্য। আলোচনা সভা শেষে শহীদের স্মরণে ও তাদের আত্মত্যাগ বর্তমান প্রজন্মের কাছে বিভিন্ন গান , কবিতা ও নাচের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়।
আলোচনা সভায় বক্তব্যে গোপাল দেব শর্মা বলেন, তার সম্পর্ক ও সমাজ কল্যাণ সংস্থা ঐতিহাসিক মহান সাঁওতাল বিদ্রোহ বা হুলের তাৎপরয তুলে ধরেন। সাঁওতালরা একত্রে হয়ে সেই সময়ে জোতদার, মহাজন, সুদখোর ও শোষক নিপীড়ক ইংরেজদের রিরুদ্ধে লড়াই করেন স্বাধীনতার জন্য। তাদের সেই আত্মত্যাগের মহিমা আজও আমাদের শিক্ষা দেয় শোষণকারীদের বিরুদ্ধে অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করার বলেন বক্তরা।
৩০ শে জুন সাঁওতাল বিদ্রোহ দিবস। ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে এক স্বসস্ত্র সংগ্রামের এক গৌরবময় ইতিহাস। কর্মঠ শান্তিপ্রিয় অরণ্যেবসবাসকারী সাঁওতালরা অন্যায়ের বিরুদ্ধে তাদের পরিবার ও প্রিয়জনদের সম্ভ্রম রক্ষার্থে শান্তিপূর্ণভাবেই কলকতার অভিমুখে লংমার্চ করেছিলো। তারা শোষকদের বিরুদ্ধে, দাস শ্রমিকদের ন্যায় দাবি আদায়ে তারা প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়েছিলো কিন্তু প্রশাসণ তাদের দাবি উপেক্ষা করে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছিলো। ৭ জুলাই মহেশলাল দারোগা ভগনাডিহিতে তার দলবল নিয়ে গ্রেপ্তার করতে আসলে হত্যার শিকার হন, এসময় হূল হুল বলে চিৎকার দিয়ে সিদু-কানু স্বাধীনতার যুদ্ধের সূচনা করেন।
সিধু-কানু, চাঁদ-ভাইরো, ফুলো-জানো’রা চেতনার স্ফুলিঙ্গ ছড়িয়ে দিয়েছে হাজার হাজার সাঁওতালদের রুদ্ধ বিবেকে। রাজমহল পাহাড়ের পাদদেশ থেকে ভাগলপুর এবং মুর্শিদাবাদের একাংশ নিয়ে গঠিত ‘দামিন-ই কোহ’ অঞ্চল; সাঁওতাল বিদ্রোহের প্রাক্কালে এই অঞ্চলে ছিল সাঁওতালদের ১৪৭৩টি গ্রাম, যেখানে বসবাস করতো ৮২,৭৯৫জন সাঁওতাল। এই সাঁওতাল বিদ্রোহ মনের পর ইংরেজরা সাঁওতালদের উদ্দেশ্য বুঝতে পেরে তাদের জন্য দামিন-আই-কোহ অঞ্চলটি ভাগ করে দেন সাঁওতালদের জন্য। দামিন-ই কোহ ফরাসি শব্দ, এটির শব্দগত অর্থ হলো পর্বতের পাদদেশ। সাঁওতাল বিদ্রোহের পরবর্তীকালে অঞ্চলটি সাঁওতাল পরগণা হিসেবে আখ্যায়িত। বুকানন হ্যামিল্টনের অপ্রকাশিত দলিল থেকে জানা যায়, বীরভূমের রাজাদের পুনঃ পুনঃ নির্যাতন-অত্যাচারের থাবা থেকে বাঁচার লক্ষ্যে ১৮০৯ খ্রিস্টাব্দের দিকে সাঁওতালরা বীরভূম ত্যাগ করেন এবং গোড্ডা মহকুমা অঞ্চলের বনাঞ্চল পরিষ্কার করে থিতু হন। ১৮৩৬ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে এই স্থানে প্রায় ৪২৭টি সাঁওতাল গ্রাম বসতি স্থাপন করে এবং জীবন নির্বাহ করতে থাকে। ইতিমধ্যেই অর্থাৎ ১৮৩২-৩৩ খ্রিস্টাব্দে সার্ভেয়ার ক্যাপ্টেন টানারের নেতৃত্বে দামিন-ই কোহর সীমানা নির্ধারিত হয়। তৎকালীন সময়ে এটির আয়তন দাঁড়ায় ১৩৬৬.০১ বর্গমাইল। এরমধ্যে ৫০০ বর্গমাইলে কোনো পাহাড় ছিল না, তবে ২৫৪ বর্গমাইল ছিল জঙ্গলাকীর্ণ। মাত্র ২৫৪ বর্গমাইল জমি ছিল আবাদযোগ্য। কিন্তু সময় পেরিয়েছে অনেক শত বছর পেরিয়ে আবারও শতবর্ষ ছঁতে বসেছে তবুও সাঁওতালদের শোষণ ও শোষকদের হাত হতে রক্ষা মেলেনি শুধু বদলেছে সেই সময়ের শোষকদের আর বর্তমানের শোষকদের কৌশল। তাই আবার সাঁওতালদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে এই শোষণের ও দাসত্বের নতুন শিকল ছিড়ে বেরিয়ে আসার প্রত্যয় নিয়ে আজকের এই সাঁওতাল বিদ্রোহ দিবস তাৎপর্য ছড়িয়ে পড়ুক দিগ হতে দিগন্তে।