ইসলামিক ডেস্ক : করজে হাসানা তথা উত্তম ঋণ হবে এমন, যা দেওয়ার পেছনে দুনিয়ার কোনো স্বার্থ থাকবে না বরং নিছক আল্লাহ তাআলাকে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশে কারও উপকারে ঋণ দেওয়া। কেননা ‘করজে হাসানা’ দেওয়ায় রয়েছে অনেক উপকারিতা। কী সেসব উপকারিতা?
করজে হাসানা হচ্ছে উত্তম ঋণ। এ ঋণ দেওয়ায় রয়েছে সওয়াব। এখানে থাকে না দুনিয়ার কোনো স্বার্থ। তবে করজে হাসানা নিয়ে এ অর্থ খরচ করতে হবে আল্লাহ তাআলা পছন্দনীয় পথে। তবেই তা হবে সওয়াব ও উপকারিতা পাওয়ার কারণ। কেননা আল্লাহ তাআলা মানুষকে এভাবে করজে হাসানা দিতে উৎসাহিত করেছেন— مَّن ذَا الَّذِي يُقْرِضُ اللّهَ قَرْضًا حَسَنًا فَيُضَاعِفَهُ لَهُ أَضْعَافًا كَثِيرَةً وَاللّهُ يَقْبِضُ وَيَبْسُطُ وَإِلَيْهِ تُرْجَعُونَ‘তোমাদের মধ্যে এমন কে আছে যে, আল্লাহকে করজে হাসানাহ দিতে প্রস্তুত; এরপর আল্লাহ তাকে দ্বিগুণ—বহু গুণ বৃদ্ধি করে দেবেন। আল্লাহই সংকোচিত করেন এবং তিনিই প্রশস্ততা দান করেন এবং তাঁরই কাছে তোমরা সবাইকে ফিরে যেতে হবে।’ (সুরা বাকারা: আয়াত ২৪৫)
করজে হাসানার উপকারিতা- করজে হাসানা হলো আল্লাহ তাআলাকে ঋণ দেওয়া। তাহলে আল্লাহ তাআলাকে দেওয়া ঋণের টাকা কীভাবে অন্যায় কাজে খরচ করা হতে পারে। তা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও একাধিক হাদিসে মানুষকে করজে হাসানা দিতে উৎসাহিত করেছেন। তুলে ধরেছেন করজে হাসানার উপকারিতা। তাহলো :
১. হজরত কায়স বিন রুমি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, কোনো একজন মুসলিম অন্য কোনো মুসলিমকে দুই বার ঋণ (করজে হাসানা) দিলে এ ঋণদান আল্লাহর পথে সে পরিমাণ সম্পদ একবার সদকা করার সমতুল্য।’ (ইবনে মাজাহ)
২. হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি (করজে হাসানার মাধ্যমে) তার ভাইয়ের অভাব পূরণ করবে, আল্লাহ তাআলা কেয়ামতের দিন তার বিপদগুলো দূর করে দেবেন।’ (বুখারি)
৩. হজরত বুরাইদাহ আল—আসলামি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি (ঋণগ্রস্ত) অভাবি ব্যক্তিকে অবকাশ দেবে, সে দান—খয়রাত করার সওয়াব পাবে। আর যে ব্যক্তি ঋণ শোধের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও সময় বাড়িয়ে দেবে সেও প্রতিদিন দান—খয়রাত করার সওয়াব পাবে।’ (ইবনে মাজাহ)
৪. হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এক ব্যক্তির কিছু ঋণ ছিল। (ঋণদাতা তাগাদা দিতে এসে কিছু অশোভনীয় আচরণ করে) সাহাবাগণ তাকে কিছু (প্রতিরোধ) করতে চাইলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তাকে ছেড়ে দাও, পাওনাদারের কিছু বলার হক আছে। তিনি তাদের আরও বললেন, তাকে এক বছর বয়সী একটি উট খরিদ করে দাও। সাহাবাগণ বললেন, আমরা তো তার দেওয়া এক বছর বয়সের উটের মতো পাচ্ছিনা; বরং তার চেয়ে ভালো উট পাচ্ছি। তিনি বললেন, তবে তাই কিনে তাকে দিয়ে দাও। কেননা যে উত্তমরূপে ঋণ পরিশোধ করে, সে তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি। কিংবা তিনি বলেছেন, সে তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম।’ (বুখারি)
মনে রাখতে হবে- করজে হাসানা যেমন আল্লাহর নির্দেশ, তেমনি তা পরিশোধে সচেষ্ট থাকাও জরুরি। তবেই করজে হাসানা দেওয়া ও নেওয়া হবে স্বার্থক ও সফল। করজে হাসানা বা উত্তম ঋণের বিনিময় সম্পর্কেও রয়েছে সুস্পষ্ট নির্দেশনা ও পুরস্কারের ঘোষণা। যেন মানুষ ঋণ নিয়ে উপকৃত হতে পারে আবার সময় মতো ঋণ পরিশোধ করতে পারে। আল্লাহ তাআলা বলেন— اِنَّ الۡمُصَّدِّقِیۡنَ وَ الۡمُصَّدِّقٰتِ وَ اَقۡرَضُوا اللّٰهَ قَرۡضًا حَسَنًا یُّضٰعَفُ لَهُمۡ وَ لَهُمۡ اَجۡرٌ کَرِیۡمٌ
‘নিশ্চয় দানশীল ব্যক্তি ও দানশীলা নারী, যারা আল্লাহকে উত্তমরূপে ধার (ঋণ) দেয়, তাদেরকে দেয়া হবে বহুগুণ এবং তাদের জন্যে রয়েছে সম্মানজনক পুরস্কার।’ (সুরা হাদিদ : আয়াত ১৮)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে করজে হাসানা গ্রহণ এবং তা সময় মতো ফেরত দেওয়ার মাধ্যমে উত্তম পুরস্কার পাওয়ার তাওফিক দান করুন। হাদিসের ঘোষিত ফজিলত ও উপকারিতা পাওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।