১৮ ডিসেম্বর ২০২২, কাতার বিশ্বকাপ জয়ের পর নিজ শহর বুয়েন্স আইরেসে আর্জেন্টিনার প্রথম প্রীতি ম্যাচ পানামার বিপক্ষে। এই ম্যাচ ঘিরে শুধু আর্জেন্টাইনদেরই নয়, ফুটবল দুনিয়ার যেখানে যেখানে আর্জেন্টিনার সমর্থক ছিল সবাই আগ্রহের চোখ রেখেছিলেন। প্রীতি ম্যাচ ঘিরে আর্জেন্টিনা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন উৎসবের আয়োজন করে ফেলল। ঘরের মাঠে প্রীতি ম্যাচে আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ জয়ের উৎসব দেখলো। মাঠের খেলায় আবার আর্জেন্টিনা ২-০ গোলে হারিয়েছে পানামাকে। মেসি গোল করলেন, গোল করালেন। ৮০০ গোলের মাইল ফলক ছুঁয়ে ফেললেন মেসি।সবকিছু ছাপিয়ে গেল উৎসবের অন্য আনুষ্ঠানিকতায়। আবেগে চোখের জল পড়ল সবুজ ঘাসে। বুয়েন্স আইরেসের ৮৫ হাজার দর্শকঠাসা মনুমেন্টাল ডি নুনেজ স্টেডিয়ামে তিল ধারনের জায়গা ছিল না। তিন তারকার জার্সিতে প্রথম ম্যাচ খেলতে নামা মেসিদের। ১৫ লাখ দর্শক আসতে চেয়েছিল। ম্যাচ কাভার করার জন্য দেড় লাখ সাংবাদিক আবেদন করেছিল। সবার চোখে ঐতিহাসিক ম্যাচ। সবাই সাক্ষী হতে চায়। তিন মাস পেরিয়ে গেলেও মেসিদের বিশ্বকাপ জয়ের উজ্জলতা এতটুকু কমেনি।
ম্যাচ শুরুর আগে জাতীয় সংগীত বাজল। আবেগের প্লাবন ছুটল খেলোয়াড়দের মধ্যে। গ্যালারির দর্শকদের চোখে মুখে আবেগ। চোখের জল পড়ল। মেসির চোখের জল দেখলেন ম্যাচের সাক্ষীরা। শুধু মেসি কেন সবার চোখের কোনায় জল জমিয়ে দিল আর্জেন্টিনার জাতীয় সঙ্গীত। গ্যালারি গাইল স্প্যানিশ ভাষার গান। আগামীতে চ্যাম্পিয়ন হবে আর্জেন্টিনা সেই শপথও গানে গানে কণ্ঠ মেলালেন হাজার হাজার দর্শক। ভাইরাল হওয়া গানের কথা বাংলায় রূপান্তর করলে যা হয়,‘আমরা আবারও লড়াই করব। আমরা আবার বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হব। যেভাবে চ্যাম্পিয়ন হয়েছি ৮৬ এবং ২২ বিশ্বকাপে। এসো এসো, আমাদের সঙ্গে তোমরাও সুর মেলাও। তুমি নিজেকে আবিষ্কার করবে ফুটবল বন্ধু মেসির হাত ধরে। আমরাই রাজত্ব করব ফুটবলের সব মাঠে।’
গ্যালারিতে ছিল মেসির ছবি। ম্যারাডোনার ছবি। আর্জেন্টাইনদের উচ্ছ্বাস দেখে নিজেকে রাখতে পারেননি। কাঁদতে দেখা গেল মেসিকে। দর্শক ঢোল বাদ্য বাজিয়ে উৎসব মুখর করল। আর আর্জেন্টিনা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন বিশ্বকাপটাকে মাঠে এনে রাখল। প্রত্যেক ফুটবলারকে একটা করে বিশ্বকাপ উপহার দিল।
এমন মুহূর্তে পুরো স্টেডিয়ামে আবেগে ভাসল। উত্তাল হয়ে উঠল গ্যালারি। ফ্রান্সকে হারিয়ে বিশ্বকাপ জয়ের রাতেও বোধহয় এমন আবেগ দেখেছিলেন আর্জেন্টাইনরা। সেই অনুভূতিটাকে আরো একবার গায়ে মাখল আর্জেন্টাইনরা। পানামার খেলোয়াড়রা দেখলেন আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ জয়ের উৎসব করছে। এমন ঝলমলে রাতে মেসি, ডি মারিয়া, এমিলিয়ানো মার্টিনেজদের সঙ্গে ছবি তুলতে দেরি করলেন না পানামার ফুটবলাররা। পানামার খেলোয়াড়রা দল বেঁধে মেসিদের সঙ্গে ছবি তোলা, অটোগ্রাফ নেওয়ার কাজটিও সেরেছেন। এমন দৃশ্য বিরল। প্রতিপক্ষের কাছে হেরে তাদের সঙ্গে ছবি তোলার লাইন, জার্সিতে অটোগ্রাফ নেওয়া ঘটনা কমই আছে।
আর্জেন্টিনার ফুটবলারদের পরিবারও মাঠে নামেন। মেসি বিশ্বকাপটাকে গ্যালারির দিকে উচিয়ে ধরেন। দর্শকও তাকে অভিবাদন জানান। মেসিও তার জবাব দেন। মেসিকে বক্তব্য দিতে অনুরোধ করা হয়। মাঠে দাঁড়িয়ে দর্শকদের মেসি বলেন,‘আজ আমাদের দিন। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার উৎসবের দিন। সময় এখন তিন তারকা উপভোগের। বিশ্বকাপটাকে আপনাদের সামনে তুলে ধরা এটাই সবচেয়ে বড় অর্জন আমাদের। আমি বলেছিলাম কোপা আমেরিকা, বিশ্বকাপ জয়ের জন্য সবকিছু বিলিয়ে দেব। আজকের এই আনন্দের মুহুর্তটাকে দেখার জন্য আমি মুখিয়ে ছিলাম।’
পাশের খেলোয়াড়দের দেখিয়ে মেসি বলেন, ‘এই জার্সির জন্য নিজেদের সবকিছু ঢেলে দেওয়ার কারণে আজকের স্বীকৃতি তাদেরও প্রাপ্য।’ মেসি আগের কোচদের কথাও স্মরণ করেন। তাদেরকেও ধন্যবাদ জানান তিনি। ৮৬’র পর আজকের ট্রফিটা জয় করতে অনেক সময় লেগেছে। বিশ্বাস করি চতুর্থ বিশ্বকাপটা জিততে এতো অপেক্ষা করতে হবে না। আমাদের বেশি সময় লাগবে না। একটা জিনিস তো বুঝতে পারছেন শুধু ভালো দল থাকলেই বিশ্বকাপ জয় করা যায় না। এটা কঠিন কাজ। অনেক কিছুর ওপর নির্ভর করছে।’