রতনপারভেজ, ব্রাহ্মনবাড়িয়া: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস পালিত হয়েছে। এ উপলক্ষে শনিবার (১৭ মার্চ) সকালে উপজেলা প্রসাশনের কার্যালয়ের সামনে থেকে এক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রাটি শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে আবার পুনরায় সেই স্থানেই এসে শেষ হয়।
জাতির পিতার জন্ম দিন ও জাতীয় শিশু দিবসের স্বরণে বক্তব্য রাখেন- উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. শামছুজ্জামান, উপজেলা আওয়ামীলীগের আহব্বায়ক অধক্ষ্য জয়নাল আবেদিন, আওয়ামিলীগের যুগ্ম আহব্বায়ক মো. সেলিম, শিক্ষা অফিসার আব্দুল আলীম রানা, উপজেলা পল্লী বিদু্ৎ এর ডিজিএম আহাম্মদ শাহ্ আল জাবের, আখাউড়া রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি আব্দুল মমিন মাবুল, যুবলীগকর্মী মোক্তার হোসেন ফায়সাল প্রমুখ সহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সামাজিক সংগঠন।
এছাড়া জাতির পিতার জন্ম দিন ও জাতীয় শিশু দিবস কে কেন্দ্র করে আখাউড়া উপজেলা প্রশাসন ও আখাউড়া শহিদ স্মৃতি ডিগ্রী কলেজে রচণা প্রতিযোগীতা,উপস্থিত বক্তৃতা, মেধা যাচাই,আলোচনা সভা,চিত্রাঙ্গন প্রতিযোগিতা, পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান এবং আখাউড়া দ: ইউনিয়নের ধলেশ্বরে আকসির এম চৌধুরীর সভাপতিত্বে রাবিয়া খাতুন স্মৃতি পাঠাগারে বিকেল ৪:টায় ,দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
উল্লেখ্য, ১৯২০ সালের এই দিনে বঙ্গবন্ধু বৃহত্তর ফরিদপুর জেলার তৎকালীন গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গিপাড়ার সম্ভ্রান্ত শেখ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম শেখ লুৎফর রহমান ও মাতার নাম সায়েরা খাতুন। পিতা-মাতার চার কন্যা এবং দুই পুত্রের সংসারে তিনি ছিলেন তৃতীয়। তার ডাকনাম ছিলো খোকা। খোকা নামের সেই শিশুটি পরবর্তীতে হয়ে ওঠেন নির্যাতিত-নিপীড়িত বাঙালির ত্রাতা ও মুক্তির দিশারী। গভীর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, আত্মত্যাগ এবং জনগণের প্রতি মমত্ববোধের কারণে পরিণত বয়সে হয়ে ওঠেন বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা। এক রাজনৈতিক সংগ্রামবহুল জীবনের অধিকারী এই নেতা বিশ্ব ইতিহাসে ঠাঁই করে নেন স্বাধীন বাংলাদেশের রূপকার হিসাবে। বাঙালি জাতির ইতিহাসে বঙ্গবন্ধুর অবদান চিরদিন স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ থাকবে। আজীবন সংগ্রামী বঙ্গবন্ধুর যখন জন্ম হয় তখন ছিল বৃটিশ রাজত্বের শেষ অধ্যায়। গ্রামের স্কুলে তার লেখাপড়ার হাতেখড়ি।
১৯২৭ সালে শেখ মুজিব গিমাডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। নয় বছর বয়সে ১৯২৯ সালে গোপালগঞ্জ পাবলিক স্কুলে ভর্তি হন এবং এখানেই ১৯৩৪ সাল পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। ১৯৩৭ সালে গোপালগঞ্জ মাথুরানাথ ইনস্টিটিউট মিশন স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি হন। কিশোর বয়সেই বঙ্গবন্ধু সক্রিয় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। গোপালগঞ্জ মিশন স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে অধ্যয়নকালে তৎকালীন বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে যোগদানের কারণে বঙ্গবন্ধু প্রথমবারের মতো গ্রেপ্তার হয়ে কারাবরণ করেন। এরপর থেকে শুরু হয় তার বিপ্লবী জীবন। গোপালগঞ্জ মিশন স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করার পর তিনি কলকাতার ইসলামীয়া কলেজে (বর্তমান নাম মাওলানা আজাদ কলেজ) ভর্তি হন।
এই কলেজ থেকে সক্রিয়ভাবে তিনি ছাত্র রাজনীতি শুরু করেন। ১৯৪৭ সালে অর্থাৎ দেশবিভাগের বছর এ কলেজ থেকে বিএ ডিগ্রি লাভ করেন। পাকিস্তান-ভারত পৃথক হয়ে যাওয়ার পর শেখ মুজিব পূর্ব পাকিস্তানে ফিরে এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হন। ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠা করেন পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ যার মাধ্যমে তিনি উক্ত প্রদেশের অন্যতম প্রধান ছাত্রনেতায় পরিণত হন।
৬৬’র ছয় দফা আন্দোলন, ৬৯’র গণঅভ্যুত্থান পেরিয়ে ৭০ সালের নির্বাচনে নেতৃত্ব দিয়ে বঙ্গবন্ধু বাঙালির অবিসংবাদিত নেতায় পরিণত হন। তার নির্দেশনা মোতাবেক ৯ মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বীর বাঙালি ৭১’র ১৬ ডিসেম্বর বিজয় ছিনিয়ে নেয়। জন্ম হয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের। ৭৫’র ১৫ আগস্ট কালরাতে ঘাতকদের তপ্ত বুলেটে সপরিবারে নিহত হন বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান